what is science

বিজ্ঞান কাকে বলে? জানুন বিজ্ঞানের বিস্তারিত

বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞানের অবদান আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আমরা যে কাজগুলো করি, তার প্রায় সবকিছুতেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানুষকে শুধু প্রকৃতির শক্তি ব্যবহার করতে সাহায্য করছে না, বরং নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে সভ্যতাকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ প্রকৃতির ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু আজ মানুষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। বিজ্ঞানের সুফল ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা যায় না।

পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে যেসব সঠিক ও সংগঠিত জ্ঞান পাওয়া যায়, তাকেই বিজ্ঞান বলা হয়। বিজ্ঞান মূলত প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান, যা যাচাই বাছাই ও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত এই জ্ঞানকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানোই বিজ্ঞানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শুধু প্রাপ্ত জ্ঞানই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিও সমানভাবে মূল্যবান। তাই বিজ্ঞানকে একইসঙ্গে জ্ঞান ও জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সম্পর্কে আমরা আরও কিছু জানবো এই আর্টিকেল এর পরবর্তী সেশন গুলো থেকে। আসলে বিজ্ঞানের ব্যাপারে বললে বলা শেষ হবে না। তাই আমরা যতটা পারি এখানে কভার করতে চেষ্টা করবো। 

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

বিজ্ঞান কি?

বিজ্ঞান শব্দের অর্থ হলো বিশেষ জ্ঞান। “বিজ্ঞান” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে, যেখানে “বি” অর্থ বিশেষ বা পৃথক এবং “জ্ঞান” অর্থ বিদ্যা বা জ্ঞান। সুতরাং বিজ্ঞান বলতে বোঝায় এমন এক বিশেষ জ্ঞান, যা পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। বিজ্ঞান কেবল তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং তথ্যকে যুক্তি ও প্রমাণ দ্বারা নির্ভরযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে। এ কারণে বিজ্ঞানের প্রতিটি জ্ঞানই পরীক্ষাযোগ্য এবং সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো থাকে।

বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে সংগঠিত জ্ঞান। মানুষ প্রথমে কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে, তারপর পরীক্ষার মাধ্যমে তার কারণ খুঁজে বের করে। এইভাবে সত্যকে যাচাই করাই বিজ্ঞানের মূল কাজ। উদাহরণস্বরূপ, আমরা প্রতিদিন দেখি সূর্য পূর্ব দিক থেকে ওঠে। এটি পর্যবেক্ষণ। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ বলছে পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘূর্ণন করার কারণে সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উঠতে দেখা যায়। এভাবেই বিজ্ঞান আমাদের চারপাশের জগতকে ব্যাখ্যা করে।

বিজ্ঞান কয় প্রকার ও কী কী?

বিজ্ঞানকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়; যেমন পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান। এখন এই প্রতিটি ভাগের কিছুটা করে বিবরণ আমরা জানবো। বিজ্ঞানের পরিসর আসলে বলে শেষ করা যাবে না। তারপরও এখানে সংক্ষিপ্ত ধারনা দিবো আমরা।  

পদার্থবিজ্ঞান

বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করি। এই ধরনের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বারবার পরীক্ষা ও প্রমাণের মাধ্যমে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেগুলোকে নিয়ম বা সূত্র আকারে প্রকাশ করা হয়। পদার্থবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিরন্তর গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যান। তাদের আবিষ্কার ও নতুন নিয়মাবলি আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে এবং প্রকৃতিকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সহায়তা করে।

রসায়নবিজ্ঞান 

রসায়ন বিজ্ঞানে বিভিন্ন উপাদানকে একত্রিত করে নতুন ওষুধ আবিষ্কার করা হয়। একইসাথে নানা পদার্থকে সঠিকভাবে মিশ্রণ ও পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন পদার্থ তৈরি করা সম্ভব হয়। রসায়নবিদরা প্রকৃতি থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান খুঁজে বের করেন এবং সেগুলোকে একত্রিত বা রূপান্তর করে মানবকল্যাণে নতুন উপকারী পদার্থ উদ্ভাবন করেন।

জীববিজ্ঞান

জীববিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জীবের গঠন, বিকাশ, উৎপত্তি, কার্যক্রম এবং ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের অধ্যয়ন করি। এটি জৈব বিজ্ঞান নামেও পরিচিত।জীববিজ্ঞান মূলত এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যে, একটি জীব কিভাবে জীবন যাপন করে এবং অন্য জীবের সঙ্গে তার সম্পর্ক বা আচরণ কেমন হয়।

বিজ্ঞানের গুরুত্বঃ 

বিজ্ঞান আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে দিশা দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জ্ঞানের আকাশে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পেরেছি এবং পৃথিবীর নানা ঘটনাবলি ও প্রাকৃতিক উপাদানকে বুঝতে সক্ষম হয়েছি। বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সুনিয়ন্ত্রিত করেছে। তাই মানুষের জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

কয়েকশো বছর আগে মানুষ এতটা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান রাখতো না। আজ আমরা যেসব প্রযুক্তি, যন্ত্র বা সুবিধা ব্যবহার করি, তার প্রায় সবই বিজ্ঞানের হাত ধরে এসেছে। বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন অনেকটাই অন্ধকার ও কঠিন হতো।

বিজ্ঞান না থাকলে কি হবে?

advantage of science

যদি বিজ্ঞান না থাকত, আমাদের জীবন আজকের মতো আরামদায়ক, নিরাপদ বা সুসংগঠিত হত না। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা আধুনিক ওষুধ, টিকা বা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারতাম না। ছোট ছোট রোগও মারাত্মক হয়ে উঠত এবং রোগীর মৃত্যুহার অনেক বেশি হতো। জরুরি অবস্থায় রোগীর জীবন বাঁচানোর ব্যবস্থা থাকত না।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকত। মানুষ কেবল সরাসরি দেখা বা চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারত। পরিবহন ব্যবস্থা খুব সীমিত হতো। মানুষকে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে গিয়ে অনেক সময় এবং পরিশ্রম ব্যয় করতে হতো। গাড়ি, ট্রেন বা বিমান না থাকলে ভ্রমণ ধীর ও ঝুঁকিপূর্ণ হতো।

বিদ্যুৎ না থাকলে রাতের সময় অন্ধকার, ঘরের কাজ ধীরগতি, এবং জীবনযাত্রা অনেক কষ্টকর হতো। কম্পিউটার, স্মার্ট ডিভাইস বা ঘরোয়া যন্ত্রপাতি না থাকলে আমাদের কাজের গতি কমত এবং দৈনন্দিন কাজ অনেক সময়সাপেক্ষ হত।

বিজ্ঞান ছাড়া মানুষ প্রকৃতি, মহাকাশ বা পরিবেশ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকত। আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহাকাশের রহস্য বোঝার কোনো সুযোগ হতো না। খাদ্য উৎপাদনও সীমিত থাকত, কারণ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক যন্ত্র না থাকলে ফসল উৎপাদন কম হতো।

FAQs

বিজ্ঞান কীভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে?

বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। দৈনন্দিন জীবনকে আরামদায়ক করতে বৈদ্যুতিক যন্ত্র, স্মার্ট ডিভাইস এবং ঘরোয়া সরঞ্জামের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, বিজ্ঞান আমাদের পরিবেশ, আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতন করেছে। খাদ্য ও কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রজনন পদ্ধতি খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছে। এই সমস্ত কারণে বলা যায়, বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সুস্থ, সহজ, আরামদায়ক এবং নিরাপদ করে তুলেছে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রভাব কেমন?

আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা অনেক সহজ ও কার্যকর হয়ে উঠেছে। নতুন ওষুধ, টিকা এবং সার্জারি পদ্ধতির সাহায্যে আগে যেসব রোগ প্রাণঘাতী ছিল, তা এখন নিয়ন্ত্রণযোগ্য বা পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। উন্নত যন্ত্রপাতি, যেমন এক্স-রে, এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাফি এবং ল্যাব পরীক্ষার যন্ত্র মানুষকে রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে। এছাড়াও, বড় হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার রোগীর যত্নকে আরও নিরাপদ করেছে।

বিজ্ঞানের কি কোন খারাপ দিক আছে?

অবশ্যই! বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে অনেকভাবে উন্নত করেছে, তবে এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। বিজ্ঞান যুদ্ধ ও ধ্বংসের যন্ত্রও তৈরি করেছে, যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক অস্ত্র, যা মানবজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাছাড়া, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও স্মার্ট ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে অলস ও প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলেছে এবং সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছে। তাই বলা যায়, বিজ্ঞানের ব্যবহার যত উন্নতই হোক, এর অতিরিক্ত বা অযথা ব্যবহার মানুষ এবং প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এবং সেজন্য সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

শেষ কথা

আশা করছি আপনারা বিজ্ঞান কি এবং এর পরিসর সম্পর্কে একটি ধারনা পেয়েছেন। বিজ্ঞান আমাদের প্রতিদিনের জীবনে একটি অত্যন্ত অপরিহার্য অংশ। দিন যতই যাচ্ছে আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এর প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। তাই কোনোভাবেই বিজ্ঞানের অবদানকে অস্বীকার করা যাবেনা কারণ কোন না কোন ক্ষেত্রে এর উপস্থিতি আমরা ঠিকই দেখতে পাবো। 

Author

  • শারমিন সিমি একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিকা, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন নিজ বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে। শিক্ষাদানে তাঁর গভীর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রিয় করে তুলেছে।

    শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওয়েবসাইটে নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *