Three bigha corridor

তিন বিঘা করিডোর কোন জেলায় অবস্থিত? কীভাবে যাবেন?

তিনবিঘা করিডোর হলো ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি বিশেষ ভূখণ্ড। এই করিডোরটি হলো ভারতের মালিকানাধীন একটি সরু রাস্তা, যার আয়তন প্রায় তিন বিঘা জমি। আপনি কি জানেন তিন বিঘা করিডোর কোন জেলায় অবস্থিত? এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার সাথে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত।

মূলত, তিনবিঘা করিডোরটি ব্যবহৃত হয় ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ বা ছিটমহল, যা দহগ্রাম আঙ্গরপোতা নামে পরিচিত, সেটির সাথে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের বাধাহীন ও সরাসরি যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য। এই করিডোরটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে গরম দেশ কোনটি?

তিন বিঘা করিডোর এর অবস্থান 

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের সময় ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত নির্ধারণের সময় বহু স্থানে সীমান্তরেখা অস্বচ্ছভাবে টানা হয়। ফলে এক দেশের ভেতরে অন্য দেশের অনেকগুলো ছোট ছোট জমি বা ছিটমহল থেকে যায়। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের প্রায় ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল অবস্থান করতো।

তিনবিঘা করিডোরের অবস্থান এমন এক ভৌগোলিক স্থানে, যা ভারতের ভূখণ্ডে হলেও এটি বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা গ্রামকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এই দুটি এলাকা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অংশ হলেও, তাদের চারপাশে ছিল ভারতের কুচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের ভূমি। ফলে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দেশের ভেতর থেকেও কার্যত বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় জীবনযাপন করছিলেন।

এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির আওতায় ভারতের তিন বিঘা জমির ওপর একটি সরু সংযোগপথ বা করিডোর নির্মাণ করা হয়, যা দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতার মানুষদের বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এ করিডোরটিই আজ পরিচিত “তিনবিঘা করিডোর” নামে।

যদিও করিডোরটি পুরোপুরি ভারতের ভূখণ্ডে অবস্থিত, তবুও এটি স্থায়ী লিজ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। করিডোরটির এক পাশে ভারতের কুচলিবাড়ি এবং অন্য পাশে মেখলিগঞ্জ এলাকা রয়েছে। এই সংযোগপথে এমন একটি দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে একই রাস্তা দিয়ে দুই দেশের মানুষই যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের নাগরিকরা দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা থেকে মূল ভূখণ্ডে যাচ্ছেন, আর ভারতের নাগরিকরাও নিজেদের দৈনন্দিন কাজে এ পথ ব্যবহার করছেন।

একসময় এই করিডোর প্রতিদিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা থাকত, যা স্থানীয়দের জন্য অনেক অসুবিধার কারণ ছিল। তবে সাম্প্রতিক চুক্তি অনুযায়ী এখন এটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, ফলে এলাকার মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসাসহ নানা কাজে এখন সহজে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করতে পারছেন। তিনবিঘা করিডোর এখন শুধু একটি যোগাযোগপথ নয়, বরং এটি বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

কীভাবে যাবেন তিন বিঘা করিডোর? 

how to go

রাজধানী ঢাকা, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে সরাসরি বাসযোগে সহজেই পাটগ্রামে পৌঁছানো যায়। পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে মাত্র প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত তিনবিঘা করিডোর। রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা থেকেও ট্রেনযোগে পাটগ্রামে যাওয়া যায়। এই পথে প্রতিদিন প্রায় পাঁচটি ট্রেন নিয়মিতভাবে চলাচল করে। পাটগ্রাম রেলস্টেশনে নামার পর স্থানীয় রিকশা বা অটোরিকশায় চড়ে সহজেই তিনবিঘা করিডোরে যাওয়া সম্ভব, এবং এই যানবাহনগুলো দিন-রাত যেকোনো সময় পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে রেলপথে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি নিয়মিত ট্রেনের সুবিধা রয়েছেঃ 

লালমনি এক্সপ্রেস, যা শুক্রবার ছাড়া বাকি ছয় দিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে।

বুড়িমারী এক্সপ্রেস, যা মঙ্গলবার ছাড়া বাকি ছয় দিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যায়।

এছাড়া সড়কপথেও ভ্রমণ করা যায়। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে হানিফ ও শাহ আলী পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লালমনিরহাট পৌঁছানোর পর সেখান থেকে ট্রেন বা স্থানীয় বাসে করে পাটগ্রামে যাওয়া যায়, এবং পাটগ্রাম থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় চড়ে সহজেই তিনবিঘা করিডোরে পৌঁছানো সম্ভব।

তিন বিঘা করিডোরে গিয়ে কোথায় থাকবেন?

তিনবিঘা করিডোর এলাকায় ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ কয়েকটি আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল তিনবিঘা বিশেষভাবে জনপ্রিয়, যা করিডোরের একেবারে কাছেই অবস্থিত। হোটেলটিতে Wi-Fi, এয়ার কন্ডিশনিং এবং একটি মানসম্মত রেস্তোরাঁসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যা পর্যটকদের আরামদায়ক থাকার নিশ্চয়তা দেয়।

পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থানরত হোটেল পদ্মা এলাকাটির আরেকটি সুপরিচিত হোটেল, যেখানে ভ্রমণকারীরা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশে থাকতে পারেন। অন্যদিকে, তিনবিঘা করিডোর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত ইকো রিসোর্ট তিনবিঘা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এটি একটি পরিবেশবান্ধব রিসোর্ট, যেখানে রয়েছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সৌন্দর্যে ঘেরা বারান্দাযুক্ত কুটির ও শান্তিপূর্ণ আবাসন ব্যবস্থা।

যারা কম খরচে রাতযাপন করতে চান, তাদের জন্য রহিম গেস্ট হাউস ও করিডোর গেস্ট হাউস হতে পারে ভালো বিকল্প। পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত রহিম গেস্ট হাউসে রয়েছে সাধারণ কক্ষ ও শেয়ার করা বাথরুমের সুবিধা, আর তিনবিঘা করিডোরের কাছেই অবস্থিত করিডোর গেস্ট হাউসে রয়েছে সংযুক্ত বাথরুমসহ বেসিক রুম।

এছাড়াও, স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারা কাছ থেকে উপভোগ করতে চাইলে তিনবিঘা হোমস্টে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এখানকার আতিথেয়তা, গ্রামীণ পরিবেশ ও স্থানীয় খাবার পর্যটকদের এক আন্তরিক ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

FAQs

তিন বিঘা করিডোর নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

তিন বিঘা করিডোর নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতাকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা এবং সেখানকার মানুষের চলাচল সহজ করা।

তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কবে নেওয়া হয়?

তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১১ সালে। সেই বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা এলাকার মানুষ যেকোনো সময় বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করতে পারেন।

Author

  • শারমিন সিমি একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিকা, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন নিজ বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে। শিক্ষাদানে তাঁর গভীর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রিয় করে তুলেছে।

    শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওয়েবসাইটে নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *