Class 9

”পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে পৃথিবী” – অনধিক ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন লিখ।

পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে পৃথিবী- অনধিক ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন লেখ।

  • সূচনা
  • পরিবেশের উপাদান
  • ভূগোলের শাখা
  • ভূগোল ও পরিবেশ এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক
  • পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকা
  • উপসংহার

সূচনা :

মানুষ পৃথিবীতে বাস করে এবং এই পৃথিবীতেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে । পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে । পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদ, নদী, সাগর , খনিজ সম্পদ তার জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।

তার ক্রিয়া-কলাপ পরিবেশে ঘটায় নানা রকম পরিবর্তন। অফিস-আদালত , রাস্তাঘাট , শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে । বনভূমি কেটে তৈরি হয় গ্রাম বা শহরের মত লোকালয়। খাল , বিল ,পুকুর ভরাট হয়ে মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ আছে । এই সম্বন্ধের মূলে আছে এর কার্যকরণের খেলা।

পরিবেশের উপাদান :

কোন জীবের চারপাশের সকল জীব ও জড় উপাদান এর সর্বসমেত প্রভাব ও সংগঠিত ঘটনা হলো ওই জীবের পরিবেশ।

পরিবেশ বিজ্ঞানের মতে জীব সম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।

পার্ক বলেছেন , পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সকল অবস্থার যোগফলকে বোঝায়। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশও পরিবর্তিত হয়।

পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার। যেমন-

  • জড় উপাদান এবং
  • জীব উপাদান।

যাদের জীবন আছে , যারা খাবার খায় , যাদের বৃদ্ধি আছে , জন্ম আছে , মৃত্যু আছে তাদের বলে জীব। গাছপালা ,পশুপাখি , কীটপতঙ্গ , মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হল জীব।

এরা পরিবেশের উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ। মাটি, পানি , বায়ু , পাহাড়-পর্বত , নদী , সাগর , আলো , উষ্ণতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান । এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।

ভূগোলের শাখা :

পৃথিবী আমাদের আবাসভূমি। মানুষের বাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। ইংরেজি Geography শব্দটি থেকে ভূগোল শব্দ এসেছে।

প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস প্রথম Geography শব্দ ব্যবহার করেন। Geo ও graphy শব্দ দুটি মিলে হয়েছে Geography ।

Geo শব্দের অর্থ ভূ বা পৃথিবী এবং graphy শব্দের অর্থ বর্ণনা। সুতরাং Geography শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন চিন্তাধারার বিকাশ, সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন ভূগোলের পরিধি অনেক বিস্তৃত করেছে।

এখন নানা বিষয় যেমন- ভূমিবিদ্যা , আবহাওয়াবিদ্যা , সমুদ্রবিদ্যা , মৃত্তিকা , প্রাণিবিদ্যা , সমাজবিদ্যা , অর্থনীতি , রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ভূগোলের মৌলিক শাখা দুইটি-

  • প্রাকৃতিক ভূগোল
  • মানব ভূগোল

প্রাকৃতিক ভূগোলের শ্রেণীবিভাগ-

  • জীবভূগোল,
  • জলবায়ুবিদ্যা,
  • ভূমিরূপবিদ্যা,
  • মৃত্তিকা ভূগোল,
  • সমুদ্রবিদ্যা,
  • প্রাণিভূগোল।

মানব ভূগোল এর শ্রেণীবিভাগ-

  • অর্থনৈতিক ভূগোল,
  • জনসংখ্যা ভূগোল,
  • রাজনৈতিক ভূগোল,
  • আঞ্চলিক ভূগোল,
  • সামাজিক ভূগোল,
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,
  • সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোল,
  • পরিবহন ভূগোল,
  • নগর ভূগোল,
  • চিকিৎসা ভূগোল,
  • ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা।

পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে পৃথিবী- অনধিক ৩০০ শব্দের একটি প্রতিবেদন।

ভূগোল ও পরিবেশ এর আন্তঃসম্পর্ক:

পৃথিবীর মানুষের আবাসভূমি। আমরা জানি জিওগ্রাফি তথা ভূগোল শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা।

অধ্যাপক ম্যাকনি মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনাকে বলেছেন ভূগোল। তার মতে ভৌত ও সামাজিক পরিবেশে মানুষের কর্মকান্ড ও জীবনধারা নিয়ে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয় , তাই ভূগোল।

অধ্যাপক স্ট্যাম্পের মতে , পৃথিবী ও এর অধিবাসিদের বর্ণনা ভূগোল।

কোন কোন ভূগোলবিদ ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিবরণ , কেউ বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।

অধ্যাপক কার্ল রিডার ভূগোলকে বলেছেন- পৃথিবীর বিজ্ঞান। প্রকৃতি , পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান হল ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।

মানুষ যেখানে বাস করুক তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে তৈরি হয় পরিবেশ।

নদী-নালা , পাহাড়-পর্বত , বন-জঙ্গল , ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট , উদ্ভিদ , প্রাণী , পানি , মাটি , বায়ু নিয়ে গড়ে ওঠে পরিবেশ। ভূগোলের আলোচ্য বিষয় হল পরিবেশ।

পূর্বের আলোচনা থেকে বলা যায় , ভূগোলকে যত ভাগে বিভক্ত করা হোক না কেন সকল ভূগোলের সঙ্গে পরিবেশ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

তাই বলা যায় , ভূগোল ও পরিবেশ এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকা :

পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মানুষসহ সব প্রাণের অস্তিত্ব পরিবেশের উপরই নির্ভরশীল। কারণ পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি।

মানুষ যেমন তার প্রয়োজনে পরিবেশকে নিজের উপযোগী করছে; ঠিক তেমনি সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে মানুষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাণের অস্তিত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ পরিবেশ সংকটের এই দায় সমগ্র মানব জাতির।

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে সুস্থভাবে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছ সবচেয়ে বেশি জরুরি। অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ ও বনজ সম্পদকে রক্ষা করে বায়ু দূষণের মাত্রাকে কমানো সম্ভব।

বাস্তুতন্ত্রের যে সব জীব পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে সব নীতিমালা প্রণীত রয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন পরিবেশ দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে পারে।

প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পরিবেশের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুরক্ষিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

পরিবেশ সংরক্ষণের কয়েকটি উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • পরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও কলকারখানা নির্মাণ করা।
  • কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া।
  • প্লাস্টিক ও পলিথিন যেখানে সেখানে না ফেলা।
  • মৃত জীবজন্তু ও জৈব আবর্জনা মাটি চাপা দিয়ে রাখা।
  • বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ ও রাস্তার পাশে গাছ লাগানো।

উপসংহার :

সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষ নিজেদের সুবিধার্থে তৈরি করছে নানারকম প্রযুক্তি, বাড়ছে ক্রমবর্ধমান হারে শক্তি উৎপাদনের চাহিদা যার থেকে নির্গত পদার্থ মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষণে অগ্রণি ভূমিকা পালন করে চলেছে।

কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষণে প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। অধিক নগরায়ন, যানবাহন বৃদ্ধির প্রভাবে পরিবেশ তার বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।

মানুষ শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিভর্রযোগ্য, দক্ষ ও স্বাথের্র দ্বন্‌দ্ব নয়্ত এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেকোনো অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নসাপেক্ষে অনুমোদন করতে হবে।

পরিবেশ, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম-প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বিশেষত জনগণের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সব কার্যক্রমে বিশেষ করে কার্যকর জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং আদিবাসীদের ব্যাপক ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

eassignment

eAssignmentBD is a resource center for teachers and students all around the world, especially in Bangladesh. We provide educational notes for students and teachers.

Related Articles

Back to top button