কৃতি অভীক্ষা কী? ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা ও কৃতি অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য লিখ
কৃতি অভীক্ষা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বোঝা যায় কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচী থেকে কতটুকু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছে। স্কুলের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যে নম্বর পায়, তা এ ধরনের সাফল্য পরিমাপের সাধারণ উদাহরণ। আজকের লেখায় আপনারা ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা ও কৃতি অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই অভীক্ষার প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি কতদূর পৌঁছেছে তা নির্ধারণ করা। পাশাপাশি, কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত দুর্বলতা বা ত্রুটি থাকলে তা চিহ্নিত করাও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। পাঠ্যক্রমের উন্নয়ন, সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য কর্তৃপক্ষ এই অভীক্ষার ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
কৃতি অভীক্ষা কাকে বলে?
কৃতি অভীক্ষা বলতে সাধারণত শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সেই বিশেষ ধরনের অভীক্ষাকে বোঝায়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো একজন ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বা পাঠ্যক্রম থেকে কী পরিমাণ জ্ঞান, দক্ষতা এবং পারদর্শিতা অর্জন করেছে তা নির্ভরযোগ্যভাবে পরিমাপ করা। এই অভীক্ষাগুলির গঠন প্রণালী এমন হয় যাতে তা সুনির্দিষ্টভাবে শেখানো বিষয়বস্তুগুলির ওপর শিক্ষার্থীর দখল নির্ণয় করতে পারে।
এটি পরিমাপ করে যে যা শেখানো হয়েছে, তা শিক্ষার্থী কতটা সফলভাবে আয়ত্ত করেছে। এর প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীর শিক্ষণ সাফল্য বা শিক্ষাগত কৃতিত্ব মূল্যায়ন করা। বিদ্যালয়ের শ্রেণী পরীক্ষা, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বা বোর্ডের পরীক্ষাগুলি কৃতি অভীক্ষার পরিচিত উদাহরণ। এই অভীক্ষার ফল শিক্ষককে শিক্ষার্থীর দুর্বলতা ও সবলতা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যাতে তিনি পরবর্তী শিক্ষণ পদ্ধতি পরিবর্তন বা উন্নত করতে পারেন।
ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা ও কৃতি অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্যঃ

ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা একজন ব্যক্তির সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং সম্ভাবনা পরিমাপ করে, যা জন্মগত ক্ষমতা ও পরিবেশের প্রভাবে বিকশিত হয়। অন্যদিকে, কৃতি অভীক্ষা একজন ব্যক্তি ইতিমধ্যে কী শিখেছে বা কোনো নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমে সে কতটা সাফল্য অর্জন করেছে, তা পরিমাপ করে।
ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা
এই অভীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তির সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা পরিমাপ করা। এটি শুধুমাত্র বর্তমানে একজন ব্যক্তি কী জানে তা দেখে না, বরং তার মানসিক ক্ষমতা, বিচার করার ক্ষমতা এবং জটিল পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা কতটা উন্নত, তা নির্ধারণ করে।
যেহেতু এটি শেখার সম্ভাবনা পরিমাপ করে, তাই এই অভীক্ষার ফল দেখে অনুমান করা হয় যে ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে বা কর্মজীবনে ওই ব্যক্তি কতটা সফল হতে পারে বা নতুন পরিবেশের সঙ্গে কতটা সহজে অভিযোজিত হতে পারে।
ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা একজন ব্যক্তির সেই দক্ষতাগুলিকে পরীক্ষা করে যা সে প্রকৃতিগতভাবে অর্জন করেছে এবং পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত করেছে।
এই অভীক্ষাগুলিতে প্রশ্নগুলি তৈরি করা হয় ভাষার মাধ্যমে, এবং উত্তরগুলোও মূলত ভাষার মাধ্যমে দিতে হয়। যেহেতু এটি ভাষাগত বুদ্ধি পরিমাপ করে, তাই ভাষা এর একটি মূল উপাদান। যদি কোনো ব্যক্তি ভাষাটি ভালোভাবে না বোঝে, তবে তার বুদ্ধিগত সক্ষমতা থাকলেও এই পরীক্ষায় তার ফল খারাপ হতে পারে।
এই অভীক্ষা একজন ব্যক্তি তার চারপাশের পরিবেশ থেকে কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করে নতুন বা অপরিচিত সমস্যা কীভাবে সমাধান করছে, তার উপর জোর দেয়। এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় যে একজন ব্যক্তি নতুন তথ্য, ধারণা বা যুক্তি কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে গ্রহণ করতে বা বুঝতে পারছে।
কৃতি অভীক্ষা
কৃতি অভীক্ষা মূলত একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে যে জ্ঞান, দক্ষতা বা সাফল্য অর্জন করেছে, তা পরিমাপ করার একটি উপায়। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী বর্তমানে কতটা শিখেছে বা কীভাবে শিখেছে—তা মূল্যায়ন করাই এই অভীক্ষার উদ্দেশ্য।
এখানে বোঝানো হয়েছে যে কৃতি অভীক্ষা সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। শিক্ষার্থী এসব বিষয় কতটা আয়ত্ত করেছে, সেই দক্ষতাই এই অভীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়।
এই অংশ নির্দেশ করে যে কৃতি অভীক্ষায় শিক্ষার্থীর ভাষাজ্ঞান বা ভাষাগত দক্ষতা নয়, বরং নির্দিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান যাচাই করা হয়। কৃতি অভীক্ষার ফলাফল দেখে শিক্ষকরা বুঝতে পারেন ছাত্ররা কতটা শিখেছে। ফলে শিক্ষক নিজেও জানতে পারেন তাঁর শেখানোর পদ্ধতি কতটা কার্যকর হয়েছে বা কোথায় উন্নতি দরকার। অর্থাৎ, এটি শিক্ষক-শিক্ষণ প্রক্রিয়াকেও মূল্যায়ন করে।
এই অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে কৃতি অভীক্ষা সাধারণত বার্ষিক পরীক্ষা, সেমিস্টার পরীক্ষা, বোর্ড পরীক্ষা কিংবা ক্লাস টেস্টের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এগুলো সবই শিক্ষার্থীর সাফল্য যাচাই করার মাধ্যম।
FAQs
শিক্ষার্থীর ভাষাগত বুদ্ধি যাচাই কেন প্রয়োজন?
ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষার ফলাফল একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা এবং নতুন বিষয়বস্তু কত দ্রুত শিখতে পারবে, তার একটি পূর্বাভাস দেয়। যাদের ভাষাগত বুদ্ধি বেশি, তারা সাধারণত জটিল পাঠ্যবস্তু দ্রুত বুঝতে পারে। পাঠ্যক্রমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া: বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষণ-শেখানো প্রক্রিয়া ভাষার ওপর নির্ভরশীল। ভাষাগত বুদ্ধি যাচাই করে বোঝা যায় যে শিক্ষার্থী বর্তমান পাঠ্যক্রমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কতটা প্রস্তুত।
বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম উন্নয়নে কৃতি অভীক্ষার ভূমিকা কী?
কৃতি অভীক্ষা পরিমাপ করে যে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম শেষ করার পর কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান, দক্ষতা ও উদ্দেশ্যগুলি কতটা অর্জন করতে পেরেছে। যদি দেখা যায় যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের অংশে কম নম্বর পাচ্ছে, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে ওই অংশটি হয়তো দুর্বলভাবে পড়ানো হচ্ছে বা পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তুটিই কঠিন বা শিক্ষার্থীদের বয়সের তুলনায় অনুপযুক্ত।
একদল শিক্ষার্থীর সাফল্যের মাত্রা নির্ধারণে কোন অভীক্ষা বেশি কার্যকর?
একদল শিক্ষার্থীর সাফল্যের মাত্রা নির্ধারণের জন্য কৃতি অভীক্ষা সবথেকে বেশি কার্যকর। যদিও সাফল্যের মাত্রা বলতে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন কিছু বোঝাতে পারে, কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণভাবে সাফল্য বলতে বোঝানো হয় শিক্ষাগত পারদর্শিতা এবং পাঠ্যক্রমের জ্ঞান অর্জন। এই কারণেই কৃতি অভীক্ষা বিশেষভাবে উপযোগী।
শেষ কথা
একজন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক অগ্রগতি বুঝতে উভয় অভীক্ষাই প্রয়োজন। একটি দেখায় সে কী শিখতে সক্ষম, আর অন্যটি দেখায় সে কী শিখেছে। পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় এই দুই ধরনের অভীক্ষা শিক্ষার্থীর দক্ষতা ও অগ্রগতি নির্ণয়ে পরস্পরকে সম্পূরক ভূমিকা পালন করে।
