Sundarban

নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অথবা কারো কাছ থেকে শোনা একটি ভ্রমণ কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি নিবন্ধ রচনা করো

নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অথবা কারো কাছ থেকে শোনা একটি ভ্রমণ কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি নিবন্ধ রচনা করো।

৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯ম সপ্তাহের বাংলা অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর

ভ্রমণ আমাদের বর্তমান জীবনের এমন একটি অংশ যাকে অস্বীকার করে কোনোভাবেই ভালো থাকা যায় না। ভ্রমণ আমাদের ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভরে ওঠা মনকে পুনরায় কোন এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সতেজ করে তোলে। আমি আদ্যোপান্ত একজন ভ্রমণপিপাসু বাঙালি।

একটি ভ্রমণ কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি নিবন্ধ রচনা

প্রত্যেক বছর কোথাও-না-কোথাও ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুদিনের মুক্তি খুঁজে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি ছুটে যাই। তেমনই আমার এই বছরের ভ্রমণ গন্তব্য মোহময়ী সুন্দরবন। আমাদের গন্তব্য সুন্দরবনের যাত্রা শুরু হয় শিয়ালদা স্টেশন থেকে। এইখান থেকে লোকাল ট্রেনে চেপে ক্যানিং স্টেশন হয়ে বাস কিংবা অটোতে আমরা পৌছে গেছিলাম সোনাখালি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে লঞ্চে করে সুন্দরবনের বুকে একটু একটু করে আমাদের প্রবেশ শুরু। লঞ্চে ওঠার পর থেকেই মুহূর্তে মুহূর্তে চারপাশের দৃশ্য বদলে যেতে থাকে।

বেশ খানিকটা যাওয়ার পর দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের নাম-না-জানা গাছ, পাখিদের মিষ্টি আওয়াজ নদীর দুপাশ থেকে কানে ভেসে আসে। লঞ্চ থেকে জলের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম বিখ্যাত গাঙ্গেয় ডলফিন বা চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় শুশুক। তারপর লঞ্চ থেকে যখন নামলাম তখন সূর্য প্রায় পশ্চিম গগনে ঢলে পড়ার মুখে। শীতের দিন বলে একটু শীত শীত করতে লাগলো। সুন্দরবন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। আমাদের যে গাইড তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম ভারত-বাংলাদেশ এই দুই দেশ জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অধিকাংশই ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ। পৌঁছনোর পরেরদিন জঙ্গল সাফারিতে বেরিয়ে দেখতে পেলাম ঘন বনের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে মাটিতে।

বিভিন্ন নাম না জানা গাছ, পাখিদের আওয়াজ আর অদ্ভূত এক মায়াবী নিস্তব্ধতা সমগ্র প্রকৃতিকে যেন ঘিরে রেখেছে। এরইমধ্যে শ্বাসমূল আর ঠেস মূল যুক্ত গাছগুলি পরিবেশকে আরো মায়াবী করে তুলেছে। পথে চলতে চলতে চোখে পড়ল বিভিন্ন ধরনের অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর সব ফুল আর লতা গুল্ম। গাইডের থেকে শুনলাম এই জঙ্গলে বহু ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। সবচেয়ে মনমুগ্ধকর গাছ গুলির মধ্যে চোখে পড়ল বিখ্যাত সুন্দরী, গরান ও গেওয়া গাছ।

সুন্দরবনের জঙ্গলের আরেকটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এখানকার প্রাণীকুল। সুন্দরবনের স্থলভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যদিও বর্তমানে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার দরুন সহজে বাঘ চোখে পড়ে না।

জঙ্গল সাফারির প্রথম দিনে আমরাও বাঘ দেখতে পাইনি। তবে চোখে যা পড়েছিল তা কোনো অংশে কম নয়। দূর থেকে আমরা দেখেছিলাম সুন্দরবনের বিখ্যাত চিত্রা হরিণের পাল জল খেতে এসেছে নদীর ধারে; গাছের ডাল থেকে উড়ে যাচ্ছে অদ্ভূত সুন্দর রঙের পাখিরা।এছাড়া চোখে পড়ল গোসাপ, বন বিড়াল আরো কত কি। চলতে চলতে লোকমুখে জানতে পারলাম সুন্দরবনের জঙ্গলে অত্যন্ত সুদর্শন কিন্তু ভয়ংকর বিষাক্ত বহু সাপ রয়েছে। তাদের থেকে সাবধান থাকার জন্য ভ্রমণের সময় সঙ্গে গাইড এবং কার্বলিক অ্যাসিড রাখা বাধ্যতামূলক।বাঙালি একদিকে যেমন ভ্রমণপিপাসু, আরেকদিকে তেমন খাদ্যরসিকও বটে। তাই ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় রসনার স্বাদ না নিলে সেই ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই উদ্দেশ্যেই সুন্দরবনের বিভিন্ন খাবার চেখে দেখতে গিয়ে অভিভূত হয়ে পড়লাম।

এখানকার স্থানীয়দের মাটির হাঁড়িতে রান্না করা বন মোরগের মাংসের ঝোলের স্বাদ কোনদিন ভুলতে পারবোনা। তাছাড়া জলবিহারের দিন লঞ্চের রান্না হওয়া কাঁকড়ার ঝোলও ছিল অনবদ্য। এছাড়া এখানকার বন থেকে সংগ্রহ করা খাটি মধুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বাকি দিনগুলিতে বিভিন্ন ধরনের টাটকা সুস্বাদু মাছ আমাদের রসনা তৃপ্তি ঘটিয়েছিল।

এইভাবে কয়েকটি দিন সুন্দরবনে প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে আমরা পুনরায় নিজেদের জীবনে ফিরে এলাম। ফিরে আসার জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম জলপথকে। অর্থাৎ সুন্দরবন থেকে সরাসরি লঞ্চে করে পুনরায় শহরে ফিরে আসা। সেই অভিজ্ঞতাও অদ্ভুত সুন্দর ছিল।

প্রকৃতির এই পরম আশ্রয়ে ওই কয়েকটি দিন আমার পরবর্তী সারা বছরের জন্য বাঁচার রসদ জুগিয়ে দিল। সেজন্যই হয়তো আজও রাতে শহরের ঘরের নরম বিছানায় ঘুমাতে গেলে লঞ্চে কাটানো রাতের সেই জোছনাময় জঙ্গলের কথা কিংবা ট্রি-হাউজের জানালা থেকে পূর্ণিমার রাতে বাঘ দেখার স্মৃতি মনে ভেসে আসে। এখানেই ভ্রমণের প্রকৃত সার্থকতা।

Similar Posts