পরিবেশের উপাদান সমূহের সাথে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক নিরূপণ
অ্যাসাইনমেন্টঃ পরিবেশের উপাদান সমূহের সাথে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক নিরূপণ
অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সংকেত, ধাপ ও পরিধিঃ
১. ভূগোলে ধারণা ও পরিবেশের ধারনা, ভূগোলের পরিধি ও পরিবেশের উপাদান বর্ণনা;
২. পরিবেশের উপাদান গুলোকে সমাপ্ত করে এগুলো মানুষের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত তা নিরূপণ;
৩. পরিবেশ প্রাকৃতিক ও মানবিক উপাদানগুলি পরস্পর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা প্রদর্শন করে এগুলোর গুরুত্ব ব্যাখ্যা।
এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৩য় সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ভূগোল ও পরিবেশ
পরিবেশের উপাদান সমূহের সাথে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক নিরূপণ
বৃহত্তর ভূগোল পরিবারের একটি অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে বাণিজ্যিক ভূগোল। এটি একটি গতিশীল ও দ্রুত পরিবর্তনশীল বিষয়। মাত্র এক শতক পূর্বেও বাণিজ্যিক ভূগোল এর বিষয়বস্তু হিসেবে কোন স্থান বা অঞ্চলের পণ্য দ্রব্যের আদান প্রদান সংশিষ্ট আলোচনাই স্থান পেত।
পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। পৃথিবীতে বাস করে নানান রকম মানুষ, বিচিত্র তাদের জীবনধারা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে নানান রকম পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ ও মানুষের বিভিন্ন রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
ভূগোলে ধারণা ও পরিবেশের ধারনা, ভূগোলের পরিধি ও পরিবেশের উপাদান বর্ণনা;
ভূগোলের ধারণা (Concept of Geogrphy)
আমরা পৃথিবীতে বাস করি। পৃথিবী আমাদের আবাসভূমি। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। ইংরেজী Geograph শব্দটি থেকে ভূগোল শব্দ এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস প্রথম Geograph শব্দ ব্যবহার করেন। Geo ও graphy শব্দ দুটি মিলে হয়েছে Geography|
Geo শব্দের অর্থ ‘ভূ’ বা পৃথিবী এবং graph শব্দের অর্থ বর্ণনা। সুতরাং Geography শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা। পৃথিবী আবার মানুষের আবাসভূমি। অধ্যাপক ম্যাকনি (E. A. Macnee) মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনাকে বলেছেন ভূগোল।
তাঁর মতে ভৌত ও সামাজিক পরিবেশে মানুষের কর্মকাণ্ড ও জীবনধারা নিয়ে যে বিষয় আলোচনা করে তাই ভূগোল। অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্পের (Professsor L.Dudley Stamp) মতে, পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল। কোনো কোনো ভূগোলবিদ ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিবরণ, কেউ বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান। অধ্যাপক কার্ল রিটার (Carl Ritter) ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।
ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান আবার অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান। প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান হলো ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। রিচার্ড হার্টশোন (Richard Hartshorne) বলেন, পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের যথাযথ যুক্তিসঙ্গত ও সুবিন্যসত্ম বিবরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলো ভূগোল।
মার্কিন ভূগোলবিদ অ্যাকারমেনের (E. A. Ackerman) মতে, ভূগোল সকল মানবসম্প্রদায় ও পৃথিবীপৃষ্ঠে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সম্বনয়ে গঠিত ব্যাপক মিথস্ক্রিয়া ব্যবস্থার উপলব্ধি ছাড়া আর কিছুই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৬৫ সালে ভূগোলের একটি সংজ্ঞা দিয়েছে। এর মতে, পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত এবং এসব প্রাকৃতিক বিষয় বা অবয়বের সঙ্গে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যসত্ম করে তার ব্যাখ্যা খোঁজে ভূগোল।
আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের (Alexandar von Humbolt) মতে, ভূগোল হলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যেটি কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত।
মানুষ পৃথিবীতে বাস করে এবং এই পৃথিবীতেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদ-নদী, সাগর, খনিজ সম্পদ তার জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। তার ক্রিয়াকলাপ তার পরিবেশে ঘটায় নানান রকম পরিবর্তন। ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে। বনভূমি কেটে তৈরি হয় গ্রাম বা শহরের মতো লোকালয়। খাল, বিল, পুকুর ভরাট হয়। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এই মিথস্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ আছে। এই সম্বন্ধের মূলে আছে কার্যকারণের খেলা। ভূগোলের প্রধান কাজ হলো এই কার্যকারণ উদঘাটন করা। পৃথিবীর পরিবেশের সীমার মধ্যে থেকে মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম চলছে সে সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ আলোচনাই ভূগোল।
পরিবেশের ধারণা (Concept of Environment)
মানুষ যেখানেই বাস করুক তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সকল দান মিলেমিশে তৈরি হয় পরিবেশ। নদী, নালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, বন, জঙ্গল, ঘর, বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, উদ্ভিদ, প্রাণী, পানি, মাটি ও বায়ু নিয়ে গড়ে ওঠে পরিবেশ। কোনো জীবের চারপাশের সকল জীব ও জড় উপাদানের সর্বসমেত প্রভাব ও সংঘটিত ঘটনা হলো ঐ জীবের পরিবেশ। পরিবেশ বিজ্ঞানী আর্মসের (Arms) মতে, জীবসম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।
পার্ক (C. C. Park) বলেছেন,পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সকল অবস্থার যোগফল বোঝায়।স্থান ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশও পরিবর্তিত হয়। যেমন- শুরুতে মাটি, পানি, বায়ু,উদ্ভিদ,প্রাণী নিয়ে ছিল মানুষের পরিবেশ।পরবর্তীতে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মানুষের সামাজিক,অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলি।ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের পরিবেশ।
পরিবেশের উপাদান (Elements of Environment):
পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার যেমন জড় উপাদান ও জীব উপাদান। যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায়,যাদের বৃদ্ধি আছে,জন্ম আছে, মৃত্যু আছে তাদের বলে জীব। গাছ-পালা, পশু-পাখি,কীট-পতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হলো জীব। এরা পরিবেশের জীব উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ।মাটি, পানি,বায়ু,পাহাড়,পর্বত,নদী,সাগর,আলো,উষ্ণতা,আর্দ্রতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান।এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।
ভূগোল ও পরিবেশের পরিধি(Scope of Geography)
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ,নতুন নতুন আবিষ্কার,উদ্ভাবন,চিন্তা-ধারণার বিকাশ,সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন ভূগোলের পরিধিকে অনেক বিস্তৃত করেছে।এখন নানান রকম বিষয় যেমন ভূমিরূপবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা,সমুদ্রবিদ্যা,মৃত্তিকাবিদ্যা,প্রাণিবিদ্যা,সমাজবিদ্যা,অর্থনীতি,রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ভূগোলের শাখা (Branch of Geography)—->
প্রাকৃতিক ভূগোল মানব ভূগোল
প্রাকৃতিক ভূগোল —-> জীবভূগোল
- জলবায়ুবিদ্যা
- ভূমিরূপবিদ্যা
- মৃত্তিকা ভূগোল
- সমুদ্রবিদ্যা
- প্রাণী ভূগোল
- মানব ভূগোল অর্থনৈতিক ভূগোল
- জনসংখ্যা ভূগোল
- রাজনৈতিক ভূগোল
- আঞ্চলিক ভূগোল
- সামাজিক ভূগোল
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোল
- পরিবহন ভূগোল
- নগর ভূগোল
- চিকিৎসা ভূগোল
- ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা
পরিবেশের উপাদান গুলোকে সমাপ্ত করে এগুলো মানুষের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত তা নিরূপণ;
জ্ঞান আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের দ্বায়িত্বশীল নাগরিক l একজন দ্বায়িত্বশীল নাগরিকের প্রধান দ্বায়িত্ব হল দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন সাধন আর এই উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি হল সম্পদ উত্তোলন l সম্পদ উত্তোলনের জন্য সম্পদ ও প্রকৃতির অন্তঃসম্পর্ক সমন্ধে ধারণা থাকা জরুরী l প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাব্য সঞ্চয় ক্ষেত্র, সম্পদের প্রকৃতি ও গুরুত্ব, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পদের ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা প্রদানে ভূগোল শিক্ষার্থীদের কাছে অনবদ্য বিষয় l
ভূগোল অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ পৃথিবীর জন্ম থেকে শুরু করে ভূ-পৃষ্ঠ, ভূ-অভ্যন্তর, বায়ুমন্ডল, বারিমন্ডল এবং মহাশূন্য পর্যন্ত সকল বিষয়ের যুক্তিপূর্ণ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রাকৃতিক ভূগোল প্রদান করে। নিম্নে প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো।
১. প্রাকৃতিক ভূগোলের উপাদান যেমন- ভূমিরূপ (পাহাড়-পর্বত, মালভূমি, সমভূমি, মরুভূমি), ভূমিরূপ গঠনকারী শক্তি (আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, প্লেট সঞ্চালন), ক্ষয়কারী শক্তি (বিচূর্ণীভবন, নগ্নীভবন) এবং এদের নিয়ামকসমূহ (বায়ুর চাপ, তাপ, প্রবাহ, পানি প্রবাহ, বারিপাত, হিমবাহ, সমুদ্রের ঢেউ, জোয়ার ভাঁটা) পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখাকে প্রভাবিত করে।
২. পৃথিবীর জন্ম সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা প্রভৃতি প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়।
৩. পৃথিবীর অভ্যন্তরের সম্ভাব্য ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থা, উত্তাপ ও পৃথিবীর গঠন অর্থাৎ অশ্মমন্ডল, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডল সম্পর্কে জানা যায়।
৪. ভূ-আলোড়নকারী শক্তি, ভূমিরূপ, আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
৫. ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়াসমূহ যেমন- নগ্নীভবন, বিচূর্ণীভবন, নদীর কাজ, হিমবাহের কাজ, মরুভূমির প্রধান ভূমিরূপ সম্পর্কে প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়।
৬. বায়ুর স্তরবিন্যাস, উপাদান, ধর্ম, তাপ, চাপ প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
৭. বায়ুমন্ডলের গভীরতা, বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প, বায়ুর আদ্রর্ তা, বৃষ্টিপাতের কারণ ও প্রকারভেদ, বৃষ্টিবলয় প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
৮. বায়ুপ্রবাহের কারণ, দিক, শ্রেণিবিভাগ, বিভিন্ন প্রকার ঘূর্ণিবাতের বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
৯. পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের অবস্থান, আকৃতি, তলদেশের অবস্থা, জোয়ার ভাঁটা, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
১০. এছাড়া দৈনন্দিন আবহাওয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু সম্পর্কে জানা যায় প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে।
পরিবেশ প্রাকৃতিক ও মানবিক উপাদানগুলি পরস্পর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা প্রদর্শন করে এগুলোর গুরুত্ব ব্যাখ্যা।
মানব ভূগোল মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক
বৈশিষ্ট্য ও অবস্থার সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের সম্পর্ক আলোচনা করে। মানব ভূগোল পাঠে জানা যায়- পরিবেশ কীরূপে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষ নিজেকে পরিবেশের সাথে কী পরিমাণ খাপ খাওয়াতে পারে অথবা মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে কীরূপে পার্থিব পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে। মানব ভূগোলের সাথে প্রাকৃতিক ভূগোলের সম্পর্ক নিম্নের ছকের মাধ্যমে দেখানো হলে
২. প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে পদ্ধতিগত ভূগোলের সম্পর্ক : ভূগোলের যে অংশে ভৌগোলিক বিষয়াদির গাণিতিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয় তাকে পদ্ধতিগত ভূগোল বলে। পদ্ধতিগত ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হচ্ছে গাণিতিক ভূগোল। গাণিতিক ভূগোল মূলত প্রাকৃতিক ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সৌরজগত, পৃথিবীর আকার, আয়তন ও গতি, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমারেখা প্রভৃতির গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করে।
৩. প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে ভূমিরূপবিদ্যা ও ভূ-তত্ত্বের সম্পর্ক : পৃথিবীর উপরিভাগ কঠিন পদার্থ দ্বারা আবৃত, যা ‘অশ্মমন্ডল’ নামে পরিচিত। অশ্মমন্ডলের উপরিভাগ এবং ভূ-অভ্যন্তরের যাবতীয় বিষয় ভূমিরূপবিদ্যা ও ভূ-তত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয়। এই দুইটি শাস্ত্র প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- ভূ-অভ্যন্তরের স্তরসমূহ ও এর গঠন উপাদান, ভূ-আলোড়নের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ ও এর শ্রেণিবিভাগ, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতির গঠন, ভূমিকম্পের কারণ, ফলাফল, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল, সৃষ্ট ভূমিরূপ, খনিজ ও শিলার গঠন, উপাদান, শ্রেণিবিভাগ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ, আগ্নেয়গিরির ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, আগ্নেয়প্রবণ অঞ্চল ও আগ্নেয়গিরির ফলাফল, বিচূর্ণীভবন ও নগ্নীভবন প্রক্রিয়া, এর ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, নদীর উৎপত্তি ও এর ক্রমবিকাশ, নিষ্কাশন ধরণ, ক্ষয় ও ক্ষয়জাত ভূমিরূপ, পরিবহন, সঞ্চয় ও সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ প্রভৃতি।
৪. প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে জলবায়ুবিদ্যার সম্পর্ক : জলবায়ুবিদ্যায় প্রাকৃতিক ভূগোলের যে সকল উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো হলো- বায়ুমন্ডল, সৌরশক্তি, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বারিপাত, বায়ুপুঞ্জ, বায়ুপ্রাচীর, বায়ুমন্ডলীয় গোলযোগ, আবহাওয়া বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও পূর্বাভাস, জলবায়ু ও জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভৃতি। প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধান উপাদানসমূহ জলবায়ুবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়।
৫. প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে সমুদ্রবিদ্যার সম্পর্ক : সমুদ্রবিদ্যায় সাগর, মহাসাগর এবং উপসাগরসমূহের আয়তন, আকৃতি, গভীরতা, মহাসাগরের তলদেশের ভূমিরূপ, সমুদ্রস্রোত, জোয়ার ভাঁটা প্রভৃতি আলোচনা করা হয়। এগুলো মূলত প্রাকৃতিক ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং বারিমন্ডলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের পানিরাশিকে বারিমন্ডল বলে। সাগর ও মহাসাগরই বারিমন্ডলের প্রধান অংশ যা পৃথিবীর পানির বেশিরভাগ ধারণ করে আছে।