binomro sraddha ortho ki

বিনম্র শ্রদ্ধা অর্থ কি? কখন এবং কেন ব্যবহার করা হয়?

‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ একটি বাংলা শব্দগুচ্ছ যা মূলত আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিনম্রতা শব্দটির মধ্যে ‘বিনম্র’ অর্থাৎ বিনয়ী, নম্র, বা ভদ্র ভাবনা প্রকাশিত হয়, যেখানে ‘শ্রদ্ধা’ মানে সম্মান ও কৃতজ্ঞতা। ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ শব্দগুচ্ছটি একটি গভীর আবেগ যা কাউকে সম্মান জানানোর সময় আমাদের মনোভাব এবং আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আজ আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা অর্থ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই আর্টিকেল থেকে। 

আরও পড়ুনঃ যুক্ত বর্ণের তালিকা

বিনম্র শ্রদ্ধা’ বলতে কী বোঝায়?

‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ বলতে বোঝায় গভীর সম্মান ও ভক্তি, যেখানে বিনয় বা নম্রতা মিশে থাকে। এই শব্দবন্ধটি প্রায়শই কারও প্রতি গভীর সম্মান ও আবেগ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত মহান ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, বীর শহীদ, প্রবীণ বা সমাজে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের স্মরণ বা সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ প্রকাশ করা হয়। 

বিনম্র শ্রদ্ধা অর্থ কি?

বিনম্র শব্দের অর্থ হলো নম্র, অহংকারহীন বা ভদ্রচিত্তে থাকা। এটি এমন মনোভাব বা চরিত্র কে বোঝায় যেখানে অহংকার, গর্ব বা অভিমান নেই এবং অন্যের প্রতি সদয় ও নম্র আচরণ দেখা যায়।

শ্রদ্ধা শব্দের অর্থ হলো সম্মান, ভক্তি বা গুরত্ব প্রদর্শন করা। এটি কোনো ব্যক্তির প্রতি আন্তরিক সম্মান বা তার অবদান, ত্যাগ, গুণ বা অবস্থানের প্রতি মনোভাব প্রকাশ করে। 

তাই ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ মানে হলো নম্রচিত্তে ও আন্তরিকভাবে কাউকে সম্মান বা ভক্তি প্রদর্শন করা।

বিনম্র শ্রদ্ধা দিয়ে বাক্য রচনাঃ 

বিনম্র শ্রদ্ধা শব্দটি আমরা দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। এমন কিছু বাক্য গঠন করা হলো ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ শব্দটি দিয়েঃ 

  • আমরা জাতির মহান শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
  • শিক্ষকের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা সব সময় থাকা উচিত।
  • স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা নেতাদের স্মরণে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
  • দেশের উন্নয়নে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
  • বিদ্যালয়ে শিক্ষকের নির্দেশ মানা একটি ধরনের বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশ।
  • আমরা প্রাচীন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে তার সংরক্ষণ করি।

বিনম্র শ্রদ্ধা সাধারণত কাদের প্রতি প্রকাশ করা হয়?

বিনম্র শ্রদ্ধা সাধারণত বৃদ্ধ, শিক্ষক, গুরু, মহৎ ব্যক্তিত্ব, জাতীয় রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, এবং যারা সমাজের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও, যাঁরা আমাদের জীবন বা কাজে নেতৃত্বর ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রতি ও বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যাঁরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্মরণে এই শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের প্রতি জাতি ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ নিবেদন করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। মূলত বিনম্র শ্রদ্ধা হলো এমন এক ধরনের সম্মান যেখানে বিনয় এবং গভীর ভক্তি মিশে থাকে। এটি মূলত তাঁদের জন্যই সংরক্ষিত থাকে যাঁদের অবদান আমাদের জীবনে বা জাতির ইতিহাসে অনস্বীকার্য।

বিনম্র শ্রদ্ধা ও সাধারণ শ্রদ্ধার মধ্যে পার্থক্য কী?

Humble respect and general respect

‘শ্রদ্ধা’ এবং ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ শব্দ দুটির মূল ভাব এক হলেও এদের ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো:

সাধারণ শ্রদ্ধা  বিনম্র শ্রদ্ধা 
এটি কেবল সম্মান বা ভক্তি প্রকাশের একটি বহিঃপ্রকাশ। এটি শ্রদ্ধার চরম পর্যায়, যেখানে বিনয় ও আত্মনিবেদন মিশে থাকে।
প্রাত্যহিক জীবনে সম্মানিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। মহান কোনো ব্যক্তিত্বের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতে ব্যবহৃত হয়।
এটি অনেক সময় আনুষ্ঠানিক বা সামাজিক শিষ্টাচারের অংশ। এখানে হৃদয়ের গভীর থেকে আসা তীব্র আবেগ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়।
এটি সাধারণত মৌখিকভাবে বা সাধারণ সম্ভাষণে বেশি দেখা যায়। এটি প্রকাশের সময় শরীরী ভাষা বা লেখনীতে এক প্রকার বিনীত ভাব থাকে।
জীবিত বা পরিচিত মানুষের গুণাবলির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সাধারণত যাঁদের মহান আত্মত্যাগ বা দেশপ্রেমের ঋণ শোধ করা অসম্ভব, তাঁদের প্রতি এটি নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা’ সম্মানের সাধারণ প্রকাশ। বিনম্র’ বিশেষণটি শ্রদ্ধাকে অধিকতর মার্জিত ও মহিমান্বিত করে তোলে।

কেন আমরা কাউকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই? 

আমরা কাউকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই কারণ এটি আমাদের মধ্যে সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও ভক্তি প্রকাশের একটি মাধ্যম। যখন কেউ আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তখন আমরা তাদের প্রতি বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। বিনম্র শ্রদ্ধা দেখানো মানে শুধু সম্মান করা নয়, বরং সেই ব্যক্তির ত্যাগ, শিক্ষা বা অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তার মূল্যায়ন করা। 

শেষ কথা

বিনম্র শ্রদ্ধা শুধু একটি শব্দ নয়; এটি একটি আদর্শ, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে স্পর্শ করে। এটি সম্পর্ককে মজবুত করে, সমাজে সাধারণ উন্নতি ঘটায় এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে। বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি নীতি হওয়া উচিত, যাতে আমরা আমাদের চারপাশের মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে পারি।

যখন মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশ করে, তৎক্ষণাৎ সেটা সম্পর্কের মানকে বৃদ্ধি করে। এটি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা সৃষ্টি করে যা সামাজিক সম্পর্ককে মজবুত করে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিনম্র শ্রদ্ধা শিক্ষার্থীকে আরও উৎসাহিত করে এবং তাদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করে।

Author

  • শারমিন সিমি একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিকা, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন নিজ বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে। শিক্ষাদানে তাঁর গভীর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রিয় করে তুলেছে।

    শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওয়েবসাইটে নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *