what is line

রেখা কাকে বলে? রেখা কত প্রকার ও কি কি? চতুর্থ শ্রেণি

গণিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ধাপে গভীরভাবে যুক্ত। এর নানান শাখার মধ্যে জ্যামিতি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেখানে বিভিন্ন আকার আকৃতি, তাদের অবস্থান এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। জ্যামিতির অন্যতম ভিত্তিমূলক ধারণা হলো রেখা। রেখা এমন একটি মৌলিক গাণিতিক উপাদান, যার উপস্থিতি আমরা শুধু গণিতেই নয়, বরং দৈনন্দিন নানা কাজে ও পরিস্থিতিতে দেখতে পাই এবং ব্যবহার করি। আজ আমরা আপনাদেরকে জানাবো যে রেখা কাকে বলে, রেখা কত প্রকার ও কি কি। ৪র্থ শ্রেণির জন্য এই প্রশ্নটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

আরও পড়ুনঃ এক কথায় প্রকাশ চতুর্থ শ্রেণি সাজেশন ২০২৫

রেখা কাকে বলে? 

রেখা জ্যামিতির একটি ভিত্তিমূলক উপাদান, যা একাধিক বিন্দুর ধারাবাহিক সংযোগে গঠিত হয়। দুই বা ততোধিক বিন্দুকে এক সরল পথে যুক্ত করলে যে আকৃতি তৈরি হয় তাকে রেখা বলা হয়। রেখার কোনো প্রস্থ বা পুরুত্ব থাকে না; এটি কেবলমাত্র দৈর্ঘ্যের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রেখার কোনো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য নির্ধারিত থাকে না। এটি সম্পূর্ণ সোজা পথে উভয় দিকেই অনন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। যেহেতু রেখার কোনো প্রান্তবিন্দু নেই, তাই এটিকে দুই দিকেই যেমন খুশি বাড়ানো যায়। এ কারণে রেখাকে অসীম প্রসারিত একটি সরল জ্যামিতিক উপাদান হিসেবে ধরা হয়।

রেখা কত প্রকার ও কি কি?

রেখা প্রধানত দুই প্রকার – সরলরেখা ও বক্ররেখা।

সরলরেখা

যে রেখায় কোনো বিন্দু এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে গিয়ে সামান্যতম দিক পরিবর্তন করে না, তাকে সরলরেখা বলা হয়। অর্থাৎ, একটি বিন্দু যদি সম্পূর্ণ সোজা পথে চলতে থাকে এবং দুই দিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, তবে সেই রেখাটিই সরলরেখা। সরলরেখার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি কখনো বাঁক নেয় না এবং সম্পূর্ণ সোজা পথে অগ্রসর হয়। তাই সরলরেখার বক্রতাশূন্য।

সরলরেখার বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

  • সরলরেখার কোনো নির্দিষ্ট শুরু বা শেষ নেই। এটি উভয় দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • রেখার কোনো প্রস্থ বা পুরুত্ব নেই, কেবল দৈর্ঘ্যের মাধ্যমে তা নির্ধারিত হয়।
  • সরলরেখা কখনো বাঁক নেয় না বা দিক পরিবর্তন করে না।
  • সরলরেখার কোনো বাঁক বা বক্রতা নেই।
  • এটি ইচ্ছা মতো দুই দিকেই বাড়ানো যায়।
  • বাস্তব জীবনে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি গঠনের জন্য সরলরেখার ব্যবহার করা হয়।
  • কোণ, বাহু, বহুভুজসহ নানা আকৃতি গঠনের জন্য সরলরেখা অপরিহার্য। 

বক্ররেখা 

একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে পৌঁছাতে যদি দিক পরিবর্তন হয় তবে তাকে বক্ররেখা বলে। একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে পৌঁছাতে যদি দিক পরিবর্তন হয় তবে তাকে বক্র রেখা বলে। অর্থাৎ, একটি বক্ররেখা এমন একটি যা সোজা নয় এবং বাঁকা। যদি কোনো রেখার বক্রতা শূন্য না হয়, তাহলে আমরা তাকে বক্ররেখা বলতে পারি।

বক্ররেখার বৈশিষ্ট্যসমূহঃ  

  • বক্ররেখা চলার সময় দিক বা অবস্থান পরিবর্তিত হয়।
  • এটি সরলরেখার মতো সোজা নয়, বরং বাঁক, ঢেউ বা বৃত্তাকার আকার ধারণ করে।
  • বক্ররেখা কখনো বন্ধ আকারে এবং কখনো উন্মুক্ত আকারে হতে পারে।
  • বক্ররেখার কোনো অংশে বেশি বাঁক থাকতে পারে, অন্য অংশে কম।
  • প্রকৃতির বিভিন্ন আকৃতি যেমন ঢেউ, পাহাড়ের ঢাল, ফুলের পাপড়ি ইত্যাদি বক্ররেখার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
  • বক্ররেখা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার এবং শিল্পকর্মে নান্দনিক ও প্রাণবন্ত রূপ দেয়।

রেখার ব্যবহার কীভাবে হয়? 

রেখার মাধ্যমে নানা ধরনের জ্যামিতিক আকৃতি গঠন করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—সরলরেখা ব্যবহার করে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস, সামান্তরিক, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজসহ আরও বহু আকার সহজেই আঁকা যায়। আবার বক্ররেখা দিয়ে তৈরি করা যায় বৃত্ত, উপবৃত্ত, অধিবৃত্তসহ বিভিন্ন বক্র আকৃতি। শুধু জ্যামিতিতেই নয়, চিত্রকলাতেও রেখার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। রেখার ভিন্নতা, বাঁক, ঘনত্ব ও দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শিল্পীরা গড়ে তোলেন মনোমুগ্ধকর রেখাচিত্র ও নান্দনিক নকশা।

FAQs

রেখা আর রেখাংশ কি একই? 

রেখা এবং রেখাংশ এক নয়; এদের বৈশিষ্ট্যেও স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। রেখা হলো এমন একটি জ্যামিতিক ধারণা যার কোনো শুরু বা শেষ নেই। এটি উভয় দিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে এবং ইচ্ছামতো যেকোনো দিকে বাড়ানো যায়। অন্যদিকে, রেখাংশ হলো রেখার একটি সীমিত অংশ, যার নির্দিষ্ট দুইটি প্রান্ত বিন্দু থাকে। এই প্রান্ত বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বই রেখাংশের দৈর্ঘ্য এবং তা পরিমাপযোগ্য। 

রেখার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ কী?

রেখার দৈর্ঘ্য হলো দুটি বিন্দুর মধ্যে সরাসরি দূরত্ব। শুধুমাত্র রেখাংশ বা সীমিত রেখার জন্যই দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা যায়। অসীম রেখার কোনো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য নেই। সাধারণত জ্যামিতিতে রেখার কোনো প্রস্থ নেই; এটি কেবল দৈর্ঘ্য দ্বারা প্রকাশিত হয়। তবে বাস্তব জীবনে যেমন কাগজে অঙ্কন করা বা চিত্রকলায় ব্যবহার করা হলে রেখার একটি সামান্য প্রস্থ থাকতে পারে।

বাস্তব জীবনে সরলরেখা কোথায় ব্যবহার হয়?

সোজা রাস্তা বা রেললাইন হচ্ছে সরলরেখার আদর্শ উদাহরণ, কারণ এগুলো দুই স্থানের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে। পত্রিকা বা বইয়ের লেখার লাইনের ধারও একটি সরলরেখা হিসেবে ধরা যায়। তীর, লাঠি বা সোজা রডও বাস্তব জীবনের সরলরেখার উদাহরণ। 

শেষ কথা

যেহেতু জ্যামিতিতে রেখা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়, তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য এটি সম্পর্কে পরিষ্কার ও সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। রেখা সম্পর্কিত ধারণা সুন্দর, সহজ ও সঠিকভাবে বোঝার জন্যই আজকের এই ব্যাখ্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওপরের সব বিষয় মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সহজেই রেখা কাকে বলে, রেখা কত প্রকার ও কি কি – সেসব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা অর্জন করতে পারবে।

Author

  • শারমিন সিমি একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিকা, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন নিজ বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে। শিক্ষাদানে তাঁর গভীর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রিয় করে তুলেছে।

    শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওয়েবসাইটে নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *