বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি ,ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি
,ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি। ,
‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটির উক্ত পঙক্তিগুলো (৪৯-৬২) গদ্যে রূপান্তর।
৮ম শ্রেণির ৯ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ বাংলা
উত্তর সমূহ:
“বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি….. “ঝুঁটি বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি “
দুই বিঘা জমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা৷ এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রা’ নামক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা।
বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতাটি লিখেছেন৷ এই কবিতায় গরীব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এখানে একটি লোকের জমি জোর করে জমিদার – এর দখলে নেওয়ার ঘটনা অতি নিপুণভাবে কবিতার ছন্দে বলা হয়েছে৷
গরিব কৃষক উপেন একজন প্রান্তিক কৃষক৷ তার যে জমিজমা ছিল তার মধ্যে দুই বিঘা জমি ছাড়া সবই ধাণের দায়ে তাকে হারাতে হয়েছে।
তার সম্বল এখন শুধু ভিটেমাটির এই দুই বিঘা জমি৷ কিন্তু উপেনের কপাল খারাপ৷
তার এলাকার জমিদার বাবুর ভুমির শেষ নেই।
তবুও জমিদার বাবুর নজর পড়ে উপেনের দুই বিঘা জমির উপর৷ বাবু উপেন্নের জমি কিনতে চান। শুনে উপেন বলে,রাজা এই দেশের মালিক আপনি, জায়গার অভাব নেই কিন্তু আমার এই জায়গাটি ছাড়া মরার মতো ঠাঁই নেই উপেন দুই হাত জোড় করে বাবুর কাছে ভিটেটা কেড়ে না নেওয়ার অনুরোধ করে৷
এতে বাবু রেগে চোখ গমর করে চুপ করে থাকেন৷ নাছোড়বান্দা বাবু দেড় মাস পরেই মিথ্যে ঋণের দায়ে উপেনের প্রতি ডিক্রি জারি করেন।
উপেন নিজের ভিটে ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়৷ এভাবে ৯৫/৯৬ বছর কেটে যায়৷ অনেক তীর্থস্থান, শহর, গ্রাম সে বিচরণ করে, তবুও উপেন তার দুই বিঘা জমির কথা ভুলতে পারে না।
তাই মাতৃভুমির টানে উপেন একদিন নিজ গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে এসে নিজ বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়ে দেখে বাড়িতে আগের কোন চিহ্ন নেই। উপেনের মন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে, তার বসতভিটা নিজ ঐতিহ্য ভুলে অন্য রূপ ধারণ করেছে। নিজের বাড়িতে এসে উপেন্ন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে।
তার চোখ জলে ভরে যায়৷ অবশেষে তার ছেলেবেলার সেই আমগাছটির দিকে চোখ পড়ে উপেন্নের স্মৃতিময় আমগাছটি দেখে তার মনের ব্যথা দুর হয়ে যায়৷ আমগাছটির নিচে বসে সে ভাবতে থাকে ছেলেবেলার কথাগুলো। তখন চূটাত তার কোলের কাছে দুটি আম ঝরে পড়ে।
ক্ষুধার্ত উপেন ভাবে আমগাছটি তাকে চিনতে পেরে দুটি আম উপহার দিয়েছে। কিন্তু আম দুটি হাতে নিতেই বাগানের মালি লাঠি হাতে এসে উপেনকে গালিগালাজ করে, উপেনকে ধরে রাজার কাছে নিয়ে যায়৷ বাবু তখন মাছ ধরছিলেন।
মালির কাছে সব শুনে বাবু রেগে উপেনকে বকা দেন, মারতে চান। উপেন কাতর হ্রদয়ে বাবুর কাছে আম দুটো ভিক্ষা চায়৷ কিন্তু বাবু উপেনকে সাধুবেশী চোর বলে উল্লেখ করেন।
এতে উপেন হতভম্ব হয়ে যায়৷ চোর উপাধি শুনে উপেনের চোখ দিয়ে ভাগ্যের নিষ্ঠুরতা ও পরিহাসের কথা মনে পড়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে। সমাজের প্রভাবশালী মানুষরা গরিব, দুঃখী, খেটে খাওয়া মানুষদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে ধনী হয়।
তাদের এই সম্পদের লোভের কারণে তারা নিজেদের মানবতাকে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না।
তারা সমাজের দীনহীন মানুষদের প্রতারিত করে তাদের নূন্যতম সম্পদটুকু কেড়ে নিয়ে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়ে৷ কিন্তু কেউ কখনো প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো দশজনকে ঘুষ দিয়ে প্রতিবাদীকেই দোষী সাব্যস্ত করে দেয়।
তাই সমাজের সকলের উচিৎ ধনী শ্রেণির নিষ্ঠুরতাকে অবজ্ঞা করে দুর্দশাগ্রস্ত দরিদ্রদের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়া।