jukto borno list

যুক্ত বর্ণের তালিকা – সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ

বাংলা ভাষা আমাদের জাতীয় ভাষা হিসেবে শুধু কথ্য যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং সাহিত্য, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অঙ্গ। বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর বর্ণ ব্যবস্থা, যা বর্ণ, স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ এবং যৌক্তিক ধ্বনির মাধ্যমে গঠিত। বাংলা বর্ণমালায় সাধারণত দুটি ধরনের বর্ণ ব্যবহৃত হয়, স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ। 

এর বাইরে আরও একটি বিশেষ ধরন হলো যুক্তবর্ণ, যা দুটি বা ততোধিক বর্ণ একত্রিত হয়ে একটি নতুন ধ্বনি বা উচ্চারণ তৈরি করে। এই প্রবন্ধে আমরা যুক্তবর্ণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এছাড়া আমরা একটি যুক্ত বর্ণের তালিকাও দিতে চেষ্টা করবো। 

আরও পড়ুনঃ বাংলা ভাষার মৌলিক অংশ কয়টি? 

যুক্তবর্ণ কাকে বলে?

বাংলা লিখন পদ্ধতিতে যুক্তবর্ণ একটি অপরিহার্য উপাদান, যা মূলত একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এটি বাংলা ভাষার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যুক্তবর্ণ বলতে বোঝায় এমন একটি ধ্বনি বা বর্ণসমষ্টি, যা দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে তৈরি হয়। এগুলো সাধারণত স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় এবং বর্ণের মূল স্বরবর্ণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। প্রতিটি যুক্তবর্ণের নিজস্ব উচ্চারণ থাকে যা তার মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা আমরা – ‘ক্ষ’, ‘জ্ঞ’, ‘ত্র’, ‘ঞ্চ’ ইত্যাদি দেখাতে পারি। 

সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, যুক্তবর্ণ হলো বাংলা লেখার সেই বিশেষ চিহ্ন, যা একাধিক ব্যঞ্জনকে একসাথে প্রকাশ করে। এর গঠনগত ভিন্নতা এবং উচ্চারণের ক্ষেত্রে নিজস্ব নিয়মের কারণে এটি বাংলা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

যুক্ত বর্ণের বৈশিষ্ট্য

যুক্ত বর্ণের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো নিচে উল্লেখ করছি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যুক্ত বর্ণকে বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেঃ 

  • এটি একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে গঠিত হয়।
  • গঠনের পরও উচ্চারণের সময় এটি একক ধ্বনি হিসেবে শোনা যায়।
  • এর উচ্চারণ স্বতন্ত্র এবং সরাসরি স্বরবর্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
  • লিখতে গেলে এটি একটি একক বর্ণ বা চিহ্ন হিসেবে গণ্য হয়।
  • এটি বাংলা ভাষার ধ্বনিগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে।
  • লিখন ও উচ্চারণে সঠিকতা না থাকলে অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে।
  • যুক্তবর্ণ সাধারণত দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হলেও স্বতন্ত্র স্বরবর্ণের মতো কাজ করে।
  • পাঠযোগ্যতা এবং শব্দের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করে।

যুক্ত বর্ণ কত প্রকার ও কী কী? 

যুক্তবর্ণকে সাধারণত এর গঠন এবং চেহারার ভিত্তিতে দুইটি প্রধান প্রকারে ভাগ করা যায়, যেমন – স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ ও অস্বচ্ছ যুক্তবর্ণ। এ পর্যায়ে আমরা প্রতি প্রকার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করবো। 

স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ

এ ধরনের যুক্তবর্ণে উপাদান ব্যঞ্জনবর্ণগুলোর মূল চেহারা কিছুটা হলেও অক্ষুণ্ণ থাকে। এই বর্ণগুলোর দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায় যে এটি কোন কোন ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এতে উপাদান বর্ণগুলোর আংশিক বা সম্পূর্ণ রূপ দৃশ্যমান থাকে। এগুলো সাধারণত পাশাপাশি বা নিচে উপরে যুক্ত হয়, কিন্তু তাদের পরিচিতি হারায় না।

উদাহরণ:

  • ষ্ + ট = ষ্ট (এখানে ‘ষ’ এবং ‘ট’ উভয়কেই আংশিকভাবে চেনা যায়)
  • ত + ব = ত্ত্ব (এখানে ‘ত’ এবং ‘ব’ আলাদাভাবে চেনা যায়)
  • ন + দ = ন্দ

অস্বচ্ছ যুক্তবর্ণ

এ ধরনের যুক্তবর্ণে উপাদান ব্যঞ্জনবর্ণগুলোর মূল চেহারা সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। নতুন সৃষ্ট রূপটি এতটাই ভিন্ন হয় যে, কোনো পূর্বজ্ঞান ছাড়া এটিকে বিশ্লেষণ করা কঠিন। এতে উপাদান বর্ণগুলো তাদের স্বতন্ত্র রূপ হারিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন চিহ্ন তৈরি করে। এগুলো নতুন শিক্ষার্থীদের বুঝতে ও আয়ত্ত করতে বেশি কঠিন হয়।

উদাহরণ:

  • ক + ষ = ক্ষ
  • হ + ণ = হ্ণ
  • জ + ঞ = জ্ঞ
  • ট + ট = ট্ট

যুক্ত বর্ণের তালিকা

  1. ক্ষ = ক+ষ
  2. ষ্ণ = ষ+ণ
  3. জ্ঞ = জ+ঞ
  4. ঞ্জ = ঞ+জ
  5. হ্ম = হ+ম
  6. ঞ্চ = ঞ+চ 
  7. ঙ্গ = ঙ+গ
  8. ঙ্ক = ঙ+ক
  9. ট্ট = ট + ট
  10. ক্ষ্ম = ক্ষ + ম = ‍ক + ষ + ম
  11. হ্ন = হ + ন
  12. হ্ণ = হ + ণ 
  13. ব্ধ = ব + ধ
  14. ক্র = ক + ্র (র-ফলা)
  15. গ্ধ = গ + ধ
  16. ত্র = ত + ্র (র-ফলা)
  17. ক্ত = ক + ত
  18. ক্স = ক + স 
  19. ত্থ = ত + থ 
  20. ত্ত = ত + ত 
  21. ত্ম = ত + ম 
  22. ক্ক = ক + ক
  23. ক্ট = ক + ট
  24. ক্ট্র = ক + ট + র
  25. ক্ত = ক + ত
  26. ক্ত্র = ক + ত + র
  27. ক্ব = ক + ব
  28. ক্ম = ক + ম
  29. ক্য = ক + য
  30. ক্র = ক + র
  31. ক্ল = ক + ল
  32. ক্ষ = ক + ষ
  33. ক্ষ্ণ = ক + ষ + ণ
  34. ক্ষ্ব = ক + ষ + ব
  35. ক্ষ্ম = ক + ষ + ম
  36. ক্ষ্ম্য = ক + ষ + ম + য
  37. ক্ষ্য = ক + ষ + য
  38. ক্স = ক + স
  39. খ্য = খ + য
  40. স্ফ = স + ফ
  41. স্ব = স + ব
  42. স্ম = স + ম
  43. স্য = স + য
  44. স্র = স + র
  45. স্ল = স + ল
  46. হ্ণ = হ + ণ
  47. হ্ন = হ + ন
  48. হ্ব = হ + ব
  49. হ্ম = হ + ম
  50. হ্য = হ + য
  51. হ্র = হ + র
  52. হ্ল = হ + ল

শেষ কথা

আমাদের দেওয়া এই যুক্ত বর্ণের তালিকাটি প্রমাণ করে যে বাংলা লিখন পদ্ধতি তার ব্যঞ্জনবর্ণগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা এবং বৈচিত্র্য বজায় রাখে। যুক্তবর্ণের প্রতিটি রূপ শেখা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অপরিহার্য। কারণ, এই যুক্তবর্ণগুলো শুধু শব্দের সঠিক বানান নিশ্চিত করে না, বরং এর সঠিক উচ্চারণ ও ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। যুক্তবর্ণের এই তালিকাটি বাংলা ভাষা আয়ত্তের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স টুল হিসেবে কাজ করে।

Author

  • শারমিন সিমি একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিকা, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন নিজ বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে। শিক্ষাদানে তাঁর গভীর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রিয় করে তুলেছে।

    শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওয়েবসাইটে নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *