মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? এদের মধ্যে ৫ টি পার্থক্য
আপনারা কি জানেন মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ রসায়নের মৌলিক দুটি ধারণা। পদার্থ মূলত অণু বা মৌলিক দিয়ে গঠিত, যা একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংযোগে তৈরি হয়। একই মৌলের পরমাণু যুক্ত হয়ে গঠন করে মোলিক পদার্থ। অন্যদিকে, ভিন্ন মৌলের পরমাণু যুক্ত হয়ে তৈরি করে যৌগিক পদার্থ। মোলিক পদার্থ সাধারণত বিশুদ্ধ থাকে, কিন্তু যৌগিক পদার্থে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যের পদার্থ সৃষ্টি হয়।
এভাবে মোলিক ও যৌগিক পদার্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌলিক আর যৌগিক পদার্থের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে যা আমরা আজকের লেখার মাধ্যমে তুলে ধরবো।
আরও পড়ুনঃ কোন আলোতে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়?
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?
মৌলিক পদার্থ হলো এমন একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যা একই ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিত এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আর ভেঙে অন্য কোনো পদার্থে রূপান্তরিত করা যায় না। অর্থাৎ, এর প্রতিটি কণায় একই মৌলের পরমাণু থাকে।যেমন – হাইড্রোজেন (H₂), অক্সিজেন (O₂), নাইট্রোজেন (N₂), সোনা (Au), রৌপ্য (Ag), লোহা (Fe) ইত্যাদি সবই মৌলিক পদার্থ।
এই পদার্থগুলো প্রকৃতিতে সাধারণত অণুর আকারে থাকে এবং প্রতিটির নিজস্ব ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মৌলিক পদার্থই অন্য সকল যৌগিক পদার্থের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে।
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?
যৌগিক পদার্থ হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যা দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত হয়ে গঠিত হয়। এই সংযোজনের ফলে একটি নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়, যার বৈশিষ্ট্য তার উপাদান মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
যেমন, জল (H₂O) গঠিত হয়েছে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সংযোজনে, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য হাইড্রোজেন বা অক্সিজেনের মতো নয়। একইভাবে, সাধারণ লবণ (NaCl) তৈরি হয় সোডিয়াম ও ক্লোরিনের রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে। যৌগিক পদার্থকে শুধুমাত্র রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ভাঙা বা পৃথক করা যায়, শারীরিক পদ্ধতিতে নয়।
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে ৫ টি পার্থক্যঃ
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ এক জিনিস নয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তবে নিচে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে ৫টি প্রধান পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ
| মৌলিক পদার্থ | যৌগিক পদার্থ |
| মৌলিক পদার্থ একই ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিত। | যৌগিক পদার্থ দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণু দ্বারা গঠিত। |
| রাসায়নিকভাবে ভেঙে অন্য কোনো পদার্থে রূপান্তরিত করা যায় না। | রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উপাদান মৌলে বিভক্ত করা যায়। |
| নিজস্ব ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে। | এর বৈশিষ্ট্য উপাদান মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। |
| একই মৌলের মধ্যে বন্ধন থাকে বা কখনও একক অণু আকারে থাকে। | বিভিন্ন মৌলের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন থাকে। |
| শারীরিক বা রাসায়নিক পদ্ধতিতে ভাঙা যায় না। | শুধুমাত্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙা যায়। |
এগুলো ছাড়াও কিন্তু আরও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে।
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ব্যবহারঃ

মৌলিক এবং যৌগিক পদার্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, মৌলিক পদার্থগুলোর মধ্যে অক্সিজেন (O₂) শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অপরিহার্য, হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার হয়, এবং লোহা (Fe) বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। সোনা (Au) ও রূপা (Ag) সাধারণত অলংকার তৈরি এবং বৈদ্যুতিক সার্কিটে ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে, যৌগিক পদার্থের মধ্যে পানি (H₂O) জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য, সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) রান্নায় লবণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) উদ্ভিদের ফটোসিনথেসিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO₃) সিমেন্ট তৈরিতে, এবং অ্যামোনিয়া (NH₃) সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এই পদার্থগুলো শিল্প, চিকিৎসা, কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
FAQs
কেন যৌগিক পদার্থকে শুধুমাত্র রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙা যায়?
যৌগিক পদার্থকে শুধুমাত্র রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙা যায় কারণ যৌগিক পদার্থটি দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণুর রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত হয়ে গঠিত। এই বন্ধন খুব শক্ত এবং পদার্থের নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করে। শারীরিক বা সাধারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন কেটে বা চাপ দিয়ে পদার্থকে আলাদা করা সম্ভব নয়, কারণ এটি শুধুমাত্র আকার পরিবর্তন করবে, রাসায়নিক গঠন নয়।
মৌলিক পদার্থ কি রাসায়নিকভাবে ভাঙা যায়?
না, মৌলিক পদার্থকে রাসায়নিকভাবে ভাঙা যায় না। মৌলিক পদার্থ হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যা এক ধরনের পরমাণু দিয়ে গঠিত এবং এটি প্রাকৃতিক বা রাসায়নিক কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য কোনো পদার্থে রূপান্তরিত হয় না। এর অর্থ হলো মৌলিক পদার্থ নিজেই সবচেয়ে মৌলিক এবং বিশুদ্ধ ধাতু বা পদার্থ হিসেবে থাকে। এর রাসায়নিক গঠন স্থির থাকে, তাই কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে ভেঙে বা পরিবর্তন করে অন্য কোনো পদার্থে রূপান্তর করা সম্ভব নয়।
দৈনন্দিন জীবনে মৌলিক পদার্থের ব্যবহার কী কী?
দৈনন্দিন জীবনে মৌলিক পদার্থ আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন – অক্সিজেন (O₂) শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অপরিহার্য, হাইড্রোজেন (H₂) জ্বালানি ও শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সোনা (Au) ও রূপা (Ag) অলংকার, আর তামা (Cu) বৈদ্যুতিক তার, পাইপলাইন এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
শেষ কথা
আশা করি আপনারা মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ কাকে বলে এবং এদের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই পার্থক্যটি বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনারা চাইলে এটি আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। আমাদের এই ওয়েবসাইট এর অন্যান্য আর্টিকেল গুলোতে চোখ রাখুন, এমন আরও অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন।
