শিশু প্রথম যে ভাষা শেখে তাকে কি বলে? কীভাবে শেখে প্রথম ভাষা?
আপনি কি জানেন শিশু প্রথম যে ভাষা শেখে তাকে কি বলে? শিশুর জন্মের পর থেকেই সে তার চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। প্রথমে কান্না, পরে হাসি, অঙ্গভঙ্গি এবং ধীরে ধীরে শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে সে কথা বলার সক্ষমতা অর্জন করে। মাতৃভাষা হলো সেই ভাষা, যা একটি শিশু জন্মের পর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে স্বাভাবিকভাবে শেখে এবং প্রথমবারের মতো কথা বলা শুরু করে। এটি শেখানো ভাষা নয়; বরং শিশুর দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, পারিবারিক যোগাযোগ ও সমাজের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অর্জিত ভাষা।
আরও পড়ুনঃ তিন বিঘা করিডোর কোন জেলায় অবস্থিত?
শিশু প্রথম যে ভাষা শেখে তাকে কি বলে?
একটি শিশু জীবনের প্রথম শব্দটি শেখে তার মায়ের মুখ থেকে। মা-ই শিশুর ভাষা শিক্ষার প্রথম শিক্ষক। স্নেহ আর আদরে মা যখন শিশুর সঙ্গে কথা বলেন, তখন সেই শব্দগুলো শিশুর কানে বাজতে থাকে, আর সে মনোযোগ দিয়ে তা অনুসরণ করার চেষ্টা করে। মায়ের মুখের হাসি, ঠোঁটের নড়াচড়া আর মধুর স্বর, এসব শিশুকে শব্দ গঠনে আগ্রহী করে তোলে।
প্রথমে সে শুধু আওয়াজ করার চেষ্টা করে, তারপর ধীরে ধীরে জিভ ও ঠোঁট নাড়াতে শেখে। এই প্রক্রিয়াতেই একদিন হঠাৎ করে শিশুটি তার প্রথম শব্দ উচ্চারণ করে – “মা”। মায়ের মুখে নিজের নাম শুনে শিশুটি যেমন আনন্দিত হয়, তেমনি মায়েরও মুখে তখন ঝলমলিয়ে ওঠে খুশির আলো।
এই ছোট্ট মুহূর্তটিই হয় ভাষা শেখার যাত্রার সূচনা। মাতৃভাষা বলতে সেই ভাষাকে বোঝায় যা একটি শিশু জন্মের পর থেকে তার পরিবার ও নিকটবর্তী পরিবেশ থেকে স্বাভাবিকভাবে অর্জন করে এবং শেখে। এই ভাষাটি তার মানসিক বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে এবং চিন্তাভাবনা প্রকাশের মূল মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
শিশু এই ভাষা কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই শুনে শুনে, অনুকরণ করে এবং পারিবারিক সদস্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শেখে। এটি একটি স্বাভাবিক অর্জন প্রক্রিয়া, যা ব্যাকরণের নিয়ম জানার আগেই শুরু হয়। সাধারণত, শিশুর মায়ের বা পরিবারের প্রধান ব্যবহৃত ভাষাই তার মাতৃভাষা হয়।
শিশু প্রথম ভাষা কীভাবে শেখে?

শিশু প্রথম ভাষা শেখে কোনো জোরপূর্বক শিক্ষা নয়, বরং ভালোবাসা, যোগাযোগ ও পরিবেশের মাধ্যমে। সে শুনে, অনুকরণ করে, অর্থ বুঝে এবং ব্যবহার করতে করতে ভাষা আয়ত্ত করে। মায়ের কণ্ঠ ও পরিবারের ভালোবাসাই তার ভাষা শেখার প্রথম পাঠ। দেখুন কীভাবে সে ধাপে ধাপে ভাষা শিখতে থাকেঃ
-
শুনে শেখা
শিশুর ভাষা শেখার প্রথম ধাপ হলো শোনা। জন্মের পর থেকেই শিশুর শ্রবণশক্তি কার্যকর হয়, এবং সে আশেপাশের মানুষের আওয়াজ, হাসি, কান্না ও কণ্ঠস্বর শুনে ধীরে ধীরে শব্দ চিনতে শেখে। বিশেষ করে মায়ের কণ্ঠস্বর শিশুর কাছে সবচেয়ে পরিচিত ও নিরাপদ মনে হয়।
-
অনুকরণ করা
শিশুর ভাষা শেখার দ্বিতীয় ধাপ হলো অনুকরণ। সে আশেপাশের মানুষের মুখের ভাব, ঠোঁটের নড়াচড়া এবং আওয়াজ লক্ষ্য করে তা নকল করার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে সে বুঝতে শেখে কোন শব্দে আশেপাশের মানুষ হাসে, সাড়া দেয় বা কিছু দেয়— এতে করে তার ভাষা ব্যবহারের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
-
অর্থ বোঝা
শব্দ বলা শুরু করার পর শিশু শেখে শব্দের অর্থ বোঝা। যখন সে “না” শব্দ শোনে এবং কেউ কিছু করতে নিষেধ করে, তখন সে বুঝে নেয় “না” মানে নিষেধ। এইভাবে শিশু শব্দ ও কাজের সম্পর্ক বুঝতে শেখে, যা ভাষা বোঝার মূল ভিত্তি। এ পর্যায়েই শিশুর মধ্যে ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ করার বোধ তৈরি হয়।
-
বাক্য গঠন
শিশু কিছুটা বড় হলে একাধিক শব্দ একত্র করে সহজ বাক্য তৈরি করতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে একটি শব্দ অন্য শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে চিন্তা বা চাওয়া প্রকাশ করা যায়। এ পর্যায়ে সে তার প্রয়োজন ও অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে শেখে।
-
সামাজিক মিথস্ক্রিয়া
যত বেশি মানুষ ও পরিস্থিতির সংস্পর্শে শিশু আসে, তার ভাষা তত বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়। এই পর্যায়ে ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশের উপকরণে পরিণত হয়।
FAQs
মাতৃভাষাকে শিশুর প্রথম ভাষা বলা হয় কেন?
মাতৃভাষাকে শিশুর প্রথম ভাষা বলা হয় কারণ শিশু জন্মের পর যে ভাষাটি প্রথম শোনে, বুঝতে শেখে এবং কথা বলতে শুরু করে, সেটিই তার প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা। সাধারণত এই ভাষাটি সে তার মা, বাবা ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শেখে। মা ই শিশুর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটান, আদর-সোহাগ, কথাবার্তা, গল্প ও দৈনন্দিন যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি শিশুর মুখে প্রথম শব্দ আনেন।
শিশুর প্রথম ভাষা শেখার সময় কোন ইন্দ্রিয় সবচেয়ে বেশি কাজ করে?
শিশুর প্রথম ভাষা শেখার সময় শ্রবণেন্দ্রিয় বা কান সবচেয়ে বেশি কাজ করে। কারণ ভাষা শেখার প্রাথমিক ধাপ হলো শোনা। জন্মের পর থেকেই শিশু তার আশেপাশের মানুষের আওয়াজ, বিশেষ করে মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে ভাষার শব্দ, স্বরভঙ্গি ও ছন্দ চিনতে শুরু করে। এই শোনা থেকেই সে শব্দের অর্থ ও ব্যবহারের ধারণা গড়ে তোলে।
শিশুর ভাষা শেখার প্রক্রিয়াকে কী বলা হয়?
শিশুর ভাষা শেখার প্রক্রিয়াকে ভাষা-অধিগম বা ভাষা অর্জন বলা হয়। এটি হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি শিশু তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে ভাষা শিখে ফেলে।
মাতৃভাষা শিশুর মানসিক বিকাশে কীভাবে সাহায্য করে?
যখন শিশু তার মাতৃভাষায় কথা বলে এবং চিন্তা প্রকাশ করে, তখন তার বোঝার ক্ষমতা বিকশিত হয়। মাতৃভাষা শিশুকে তার আনন্দ, দুঃখ, ভয় ও ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ দেয়, যা মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
