sokoler tore sokole amra

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ কোন কবিতার অংশ? – ব্যাখ্যা করুন

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ – কবি কামিনী রায় রচিত এই অমর পঙক্তিটি শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের একটি অংশ নয়, বরং এটি নিঃস্বার্থ সামাজিকতা, মানবিকতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এক গভীর দর্শন বহন করে। এই চরণটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে মানুষ বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নয়; ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই হলো প্রকৃত মানবধর্ম। বর্তমান যুগে যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য লাভ করছে, সেখানে এই পঙক্তিটি একটি সুস্থ ও সহমর্মী সমাজ গঠনের জন্য নৈতিক দায়িত্বের একটি শক্তিশালী আহ্বান হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ আলালের ঘরের দুলাল কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ কোন কবিতার অংশ? 

এ সম্পর্কে আমরা শুরুতেই কিছুটা ধারনা দিয়েছি। কবি এই পঙক্তির মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, মানুষ যখন কেবল নিজের সুখের পেছনে ছোটে, তখন সে কখনও সত্যিকারের আনন্দ লাভ করে না। স্বার্থপরতা মানুষের জীবনে এক শূন্যতা সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, যখন কেউ নিজের ক্ষমতা, সময় ও সম্পদ অন্যের কল্যাণে ব্যয় করে, অন্যের মুখে হাসি ফোটায়, তখনই তার জীবনে স্থায়ী ও গভীরতম সুখ আসে। এটি হলো পরার্থপরতার মাধ্যমে আত্মিক তৃপ্তি লাভের দর্শন। কবিতার এই অংশ বিশেষটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় কারণ এই কথাটির তাৎপর্য অনেক। এমনকি অনেকসময় ভাব সম্প্রসারণেও এটি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়ে থাকে। 

কামিনী রায়ের ‘সুখ’ কবিতার মূল বক্তব্য কী? 

কামিনী রায়ের ‘সুখ’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যে জীবন কখনও নিষ্কণ্টক বা দুঃখমুক্ত হয় না এবং ধন-সম্পদ কিংবা ব্যক্তিগত প্রাচুর্যের পেছনে ছুটে বেড়ানো ক্ষণস্থায়ী সুখ এনে দেয়। বরং, এই কবিতাটি মানুষকে শিক্ষা দেয় যে, ব্যক্তিগত সুখের ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করাই হলো মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। কবিতার মূল পঙক্তি ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’ এই বার্তারই প্রতিধ্বনি। 

‘সুখ’ কবিতাটিতে মানবতার কোন মূল্যবোধগুলো তুলে ধরা হয়েছে?

কামিনী রায় এই পঙক্তিটির মাধ্যমে মানবতার কয়েকটি মৌলিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে। এই কবিতার কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ হলো সহযোগিতা ও পরার্থপরতা, যা আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের সুখ কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করার মধ্যেই নিহিত। এটি মানুষের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে, স্মরণ করিয়ে দেয় যে সমাজের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আমাদের কর্তব্য রয়েছে। 

এই কর্তব্যবোধ জন্ম দেয় সহানুভূতি ও সহমর্মিতার, যার মাধ্যমে আমরা অন্যের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে শিখি। এই বাণীটি ঐক্যের শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করে। একা চলার পরিবর্তে সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমেই যে কোনো সমাজ বা জাতি দ্রুত অগ্রগতি লাভ করতে পারে। ফলস্বরূপ, কবিতাটি মানবতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা ত্যাগ করে সম্মিলিত কল্যাণ ও ত্যাগের পথে চালিত হওয়ার আহ্বান জানায়।

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ পঙক্তিটির বার্তা বর্তমান সমাজে কতটা প্রাসঙ্গিক? 

পঙক্তিটি বর্তমান সমাজে এক গভীর প্রাসঙ্গিকতা বহন করে। দ্রুত প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা আমাদের সমাজে এক তীব্র ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা তৈরি করেছে, যেখানে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এই সময়ে, পঙক্তিটি একটি নৈতিক আহ্বান হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে পরের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করাতেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। 

এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক মহামারীগুলোর মতো আজকের সমস্যাগুলো কোনো একক ব্যক্তি বা দেশের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়; এই বৈশ্বিক সংকটগুলো মোকাবিলায় পঙক্তিটি ঐক্য এবং সম্মিলিত বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এটি আমাদের সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য কমাতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের সময়ে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ও যত্নবান হতে উৎসাহিত করে, যার ফলে একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়। 

FAQs

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ – এই অংশটি মানব সমাজে কীসের শক্তিকে বোঝায়? 

কামিনী রায়ের এই পঙক্তিটি মানব সমাজে মূলত ঐক্য এবং সংহতির শক্তিকে তুলে ধরে। এই অংশটি বোঝায় যে কোনো মানুষই সমাজে একা বা বিচ্ছিন্ন নয়; বরং প্রত্যেকের অস্তিত্ব এবং কল্যাণ পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যখন সমাজের প্রতিটি সদস্য নিজেদের ব্যক্তিগত গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে ‘আমরা’ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করে, তখন যেকোনো কঠিন লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হয়। 

এই পঙক্তিটির মাধ্যমে কবি মানুষের জীবনে কোন দুটি বিপরীত ধারণার ওপর জোর দিয়েছেন?

কবি নিঃস্বার্থপরতার ওপর জোর দিয়েছেন, যা আমাদের শেখায় যে অন্যের কল্যাণে কাজ করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত আনন্দ ও সার্থকতা নিহিত। এর ঠিক বিপরীতে, তিনি মানুষকে কেবল নিজের সুখ সুবিধা নিয়ে মগ্ন থাকার প্রবণতা ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পঙক্তিটি মানুষকে ক্ষুদ্র স্বার্থপরতা ও বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে বৃহত্তর মানবসমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও সহযোগী হওয়ার আহ্বান জানায়।

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ – লাইনটিকে কেন এতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে? 

এই লাইনটি কোনো নির্দিষ্ট সময় বা সমাজের জন্য নয়, বরং এটি মানব ইতিহাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সহযোগিতা এবং সংহতির প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। এটি একটি চিরন্তন সত্য যা সকল যুগে প্রযোজ্য। পঙক্তিটি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে যে সমাজের প্রতিটি সদস্য একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ। এটি সমাজের দুর্বল অংশ এবং বিপন্নদের প্রতি একটি নৈতিক দায়িত্ব পালনের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে ছোট এই বাক্যটি একটি মৌলিক নীতিবাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৈশব থেকেই মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে।

Author

  • শারমিন সিমি একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিকা, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন নিজ বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে। শিক্ষাদানে তাঁর গভীর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রিয় করে তুলেছে।

    শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওয়েবসাইটে নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *