মনে কর তোমার ঘনিষ্ঠ একজন সহপাঠীর আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তকে প্রকৃত মুমিন বান্দা হতে সহায়তা করার জন্য তুমি কী কী উদ্যোগ নিতে পারো
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ
মনে কর তোমার ঘনিষ্ঠ একজন সহপাঠীর আচরণে মুনাফিকের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তকে প্রকৃত মুমিন বান্দা হতে সহায়তা করার জন্য তুমি কী কী উদ্যোগ নিতে পারো- এ সম্পর্কিত একটি কর্মপরিকলপনা তৈরি করো।
সংকেত
১। সহপাঠীর কোন কোন আচরণে মুনাফিকের যেতে পারেলক্ষণ তার উল্লেখ ।
২। উক্ত আচরণগুলো কেন ক্ষতিকর তার ব্যখ্যা।
৩। উত্ত বিষয়ের কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি
৪ । সহপাঠীর মুনাফিকী আচরণ দূর করার উপায়।
৫। সহপাঠীকে মুমিন হওয়ার জন্য তোমার পদক্ষেপ।
নির্দেশনা
- পাঠপুস্তক থেকে উক্ত বিষয়ে ধারণা নেয়া যেতে পারে
- প্রয়োজনে অভিভাবকের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে
- মোবাইল বা যে কোন তার্চু়াল মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয় শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে
- ইন্টারনেটের সাহায্য নেয়া যেতে পারে
- আ্যাসাইনমেন্ট স্বহস্তে লিখতে হবে
নিফাক শব্দের অর্থ ভন্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি।
ইসলামী পরিভাষায় মুখে ঈমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলা হয়। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক।
মুনাফিকরা সাধারনত সামাজিক ও পার্থিব লাভের জন্য এরূপ করে থাকে। তারা মুসলমান ও কাফের উভয় দলের সাথেই থাকে। প্রকাশ্যে তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে। কিন্তু গোপনে তারা ইসলামকে অস্বীকার করে।
নিফাক হলো নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শের বিপরীত কাজ। মুনাফিকের লক্ষণ বা নিদর্শন তিনটি। যথা-
- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে
- ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং
- যখন তার নিকট কোন কিছু গচ্ছিত রাখা হয়, তখন তার খিয়ানত করে।
মুনাফিকী আচরণগুলো খুবই ক্ষতিকর। কারণ-
নিফাক জঘন্যতম পাপ। এটা মানুষের চরিত্র ধ্বংস করে ফেলে। নিফাকের ফলে মানুষ অন্যায় ও অশ্লীল কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়।
নিফাকের দ্বারা মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে মানব সমাজে মারামারি, হানাহানি ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।
মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু। এরা ইসলাম ও মুসলমানদের গোপন কথা ও দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। এরা মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য ও মারামারি সৃষ্টির চেষ্টা করে।
উক্ত বিষয়ের কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতিসমূহ-
- মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَاِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَالُٓوْا اٰمَنَّا وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيٰطِيْنِهِمْ قَالُٓوْا اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ
অর্থ: “যখন তারা (মুনাফিকরা) ঈমানদারদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪)
- মুনাফিকদের চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-
وَاللّٰهُ يَشْهَدُ اِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ لَكٰذِبُوْنَ
অর্থ: “আর আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, মুনাফিকরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। ” (সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত ১)
- রাসুলুল্লাহ (স.) বহু হাদিসে মুনাফিকদের চরিত্র বর্ণনা করেছেন। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
اٰيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ: اِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَاِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ، وَاِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
অর্থ: “মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোন কিছু গচ্ছিত রাখা হয়, তখন তার খিয়ানত করে।
- নিফাকের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
অর্থ: ” নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৪৫)
সহপাঠীর মুনাফিকী আচরণ দূর করার উপায়:
- কথা বলার সময় সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কথা বলবে না।
- কাউকে কথা দিলে তা রক্ষা করবে।
- আমানত রক্ষা করবে। যেমন কারো কাছে কোনো জিনিস ও সম্পদ আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবে এবং ফেরত দিবে। কারো সাথে কথা দিলে তা রক্ষা করবে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করবে না।
সহপাঠীর মুনাফিকী আচরণ দূর করা ও মুমিন হওয়ার পদক্ষেপ
সহপাঠীকে মুমিন হওয়ার জন্য আমার পদক্ষেপ:
মুনাফিকরা দুনিয়াতে ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়ে থাকে। আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর আযাব।
সহপাঠীকে মুমিন হওয়ার জন্য নিফাকের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে জানাবো। তাকে বোঝাবো যে, নিফাককারীকে তথা মুনাফিককে কেউই বিশ্বাস করে না। মুনাফিকের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।
হাদিসে যেসব কাজ মুনাফিকের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো তাকে বর্জন করতে বলবো। খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করবো।